বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

লেবানন সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া কৌশল

রবিবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: ইসরাইল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে কয়েক সপ্তাহের সুক্ষ্ম কূটনীতির পর যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান বদলেছে। লেবাননের ব্যাপারে যুদ্ধবিরতির বদলে এখন পুরোপুরি ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে যুক্তরাষ্ট্র।

মাত্র দুই সপ্তাহ পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স লেবাননে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করতে অবিলম্বে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু, হিজবুল্লাহর নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহকে খুন, ১ অক্টোবর দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলের স্থল অভিযান ও হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুর পর এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে- এ দোহাই দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান থেকে সরে এসেছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংস করতে ইসরাইলের এ হামলাগুলোকে সমর্থন করি, যাতে শেষ পর্যন্ত আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধান পেতে পারি।’

যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান পরস্পরবিরোধী। তারা এক দিকে, ক্রমবর্ধমান মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে প্রশয় দিচ্ছে। অন্য দিকে, ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহকে দুর্বল করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ নয়া কৌশলটি বাস্তবসম্মত কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এক দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল তাদের অভিন্ন শত্রু হিজবুল্লাহর পরাজয় থেকে লাভবান হবে। অন্য দিকে, ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে উৎসাহিত করা মানে সংঘাত আরো বাড়ানো; যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থির করে তুলতে পারে।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা জন অল্টারম্যান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহকে দুর্বল দেখতে চায়। তবে, লেবাননকে শেষ করে দেয়া বা আঞ্চলিক যুদ্ধের উসকানি দেয়ার ঝুঁকি নেয়ার মত মূল্য দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি মনে হচ্ছে এমন যে: আপনি যদি ইসরাইলকে থামাতে না পারেন, তবে অন্তত গঠনমূলক উপায়ে এমন কিছু করতে হবে; যাতে ক্ষতি কম হয়।’

এখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোন অর্থপূর্ণ আলোচনা চলছে না। ব্যাপারটি সাথে পরিচিত ইউরোপীয় সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলিরা লেবাননে মাসের জন্য না হলেও সপ্তাহব্যাপী অভিযান চালাবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরাইলের অভিযান কমপক্ষে দুইটি সুবিধা নিয়ে আসতে পারে।

প্রথমত, ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রক্সি মিলিশিয়া হিজবুল্লাহকে দুর্বল করা। যা এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাবকে রোধ করতে পারবে এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর জন্য কম হুমকি বলে বিবেচিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্র আরো বিশ্বাস করে যে, সামরিক চাপ হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে বাধ্য করবে এবং লেবাননে একটি নতুন সরকার নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে; যা শক্তিশালী মিলিশিয়া আন্দোলনকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।

এ দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ সপ্তাহে বলেছেন, ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য হল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ কার্যকর করা। প্রস্তাবটিতে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে শত্রুতা সম্পূর্ণ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে।’

এ জন্য, লেবাননে জাতিসংঘের অন্তবর্তী (ইউএনআইএফআইএল) বাহিনীকে দক্ষিণ লেবাননে মোতায়েন করা ও হিজবুল্লাহসহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসলে তা ভাল ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।