এইচবি রিতা: আমেরিকার নগরজীবনের গ্রীষ্ম শুরু হয়ে গেছে। এই মৌসুমটি উপভোগ করতে নিউইয়র্ক সিটিতে রয়েছে নানা ধরনের কার্যকলাপ ও উন্মুক্ত স্থান। তবে যে যেখানেই থাকুক না কেন- রোদে, সমুদ্রে, রাস্তায়, বাড়িতে বা কর্মস্থলে ও নিরাপদ থাকা জরুরি। আর সে লক্ষ্যে অ্যাডামস্ প্রসাশনের ‘মাল্টি এজেন্সি সামার সেইফটি প্ল্যান’ পরিকল্পনা; যার উদ্দেশ্য শহরবাসীকে নিরাপদ রাখা ও জীবনের মানোন্নয়ন ঘটানো। এ লক্ষ্যে সমুদ্রতট ও পানির উপর টহল বাড়ানো হচ্ছে, তাপপ্রবাহ ও চরম আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, তরুণদের জন্য কার্যক্রম বাড়ানোসহ অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও মাদকাসক্ত চালকদের থামাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সোমবার (২৬ মে) কমিউনিটি অপ:এড-এ অ্যাডামস্ বলেন, ‘গ্রীষ্মকালের অপরাধ প্রবণতার মধ্যেও আমরা নিউইয়র্ককে আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ বড় শহর হিসেবে রাখব। আমরা সাবওয়ে, জলপথ ও আকাশপথে এনওয়াইপিডির উপস্থিতি বাড়াচ্ছি এবং মাদকাসক্ত চালকদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকছি। এনওয়াইপিডির নতুন ‘কোয়ালিটি অফ লাইফ’ বিভাগ গ্রীষ্মকালীন সাধারণ সমস্যাগুলো যেমন অতিরিক্ত শব্দ, অবৈধ মোপেড ও এটিভির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তবে জননিরাপত্তা শুধু পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অ্যাডামস্ চান, তরুণরা আনন্দ করুক ও প্রশাসনের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক উদ্যোগগুলো যেন তাদের জন্য সারা গ্রীষ্মে কার্যকর হয়। তাই সন্ধ্যার সময় তরুণদের জন্য কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে, বিশেষ করে ‘স্যাটারডে নাইট লাইটস’ প্রকল্পের মাধ্যমে। এখন ১৩৬টি খেলাধুলার স্থান সপ্তাহান্তে শনিবার ও রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ইতোমধ্যেই পাবলিক সৈকতগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লাইফগার্ড দায়িত্ব পালন করছেন এবং লাইফগার্ড অনুপস্থিত বা বন্ধ অংশে সাঁতার কাটা নিষিদ্ধ। স্রোতের টান সব সময়ই সম্ভব, তাই সবাইকে নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ জানান অ্যাডামস্। এছাড়াও, হাঙ্গরের গতিবিধি নজরদারির জন্য আকাশ থেকে ড্রোন ব্যবহার নিযুক্ত করেছেন বলে জানান তিনি।
অ্যাডামস্ বলেন, ‘আপনারা জানেন, গ্রীষ্ম মানেই তাপপ্রবাহ। আর চরম তাপদাহ হলো আমাদের শহরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী আবহাওয়া-সম্পর্কিত বিপদ। প্রতি বছর গড়ে ৫০০-রও বেশি নিউইয়র্কার তাপজনিত কারণে মারা যান। তাই আমরা অনুরোধ করছি, চরম তাপ সম্পর্কে সচেতন ও প্রস্তুত থাকুন। আগে থেকেই আপনার নিকটবর্তী শীতল স্থান নির্ধারণ করুন, হোক তা বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়ের ঘর, কোনো শপিং মল, জাদুঘর, কিংবা সরকারি কুলিং সেন্টার (যেমন পাবলিক লাইব্রেরি)। প্রতিটি বোরোতেই পোষ্যবান্ধব কুলিং সেন্টার আছে, তাই দয়া করে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন যেন সবাই নিরাপদ থাকতে পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিটির ফ্রি ইমার্জেন্সি নোটিফিকেশন সিস্টেম ‘‘নোটিফাই এনওয়াইসিতে’’ সাইন আপ করুন, এটি আবহাওয়া ও বায়ু মানের আপডেট দেবে। এই ওয়েবসাইটটি অন্যান্য চরম আবহাওয়া যেমন হারিকেন, ট্রপিক্যাল ঝড় এবং আকস্মিক বন্যার ক্ষেত্রেও তথ্য দেয়। আপনি চাইলে airnow.gov ওয়েবসাইটেও আপনার এলাকার বায়ুমানের তথ্য জানতে পারবেন।’
অগ্নি নিরাপত্তাও গ্রীষ্মকালীন নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতি বছর হাজার হাজার অগ্নিকাণ্ড হয় বারবিকিউ গ্রিল থেকে। এর অনেকগুলোই ঘটে যখন শীত শেষে প্রথম বার প্রোপেন গ্রিল ব্যবহার করা হয়। তাই গ্রিল ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্রি-সিজন নিরাপত্তা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘ছাদে বা মাল্টি-ইউনিট বিল্ডিংয়ে গ্রিল নিষিদ্ধ। পোর্টেবল ফায়ারপ্লেস, প্যাটিও হার্থ, ফায়ার পিট ও সব ধরনের আতশবাজিও নিউইয়র্ক সিটিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ – এগুলো বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও পরিবেশের ক্ষতি করে। গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট রোধে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। এসির তাপমাত্রা ৭৮ ডিগ্রিতে সেট করুন, জানালার পর্দা টানুন, বড় যন্ত্রপাতি কম ব্যবহার করুন ও অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আনপ্লাগ করে রাখুন।’
গরমে ঠান্ডা থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পানিতে থাকা। শহরের পাবলিক সুইমিং পুলগুলো আগামী ২৭ জুন থেকে খুলবে। হাইড্র্যান্ট দিয়ে খেলা এখনো নিউইয়র্ক সিটির ঐতিহ্য – তবে অবশ্যই ফায়ারহাউস থেকে অনুমোদিত স্প্রে ক্যাপদিয়ে করতে হবে। ভুলভাবে হাইড্র্যান্ট খোলা হলে প্রতি মিনিটে ১ হাজার গ্যালনেরও বেশি পানি নষ্ট হয়। স্প্রে ক্যাপ ব্যবহারে পানির প্রবাহ নিরাপদভাবে ২৫ গ্যালন/মিনিটে সীমিত থাকে, যা এখনও যথেষ্ট প্রশান্তি দিতে পারে। স্প্রে ক্যাপ পেতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী কোনো প্রাপ্তবয়স্ক উপযুক্ত পরিচয়পত্রসহ স্থানীয় ফায়ারহাউসে যেতে পারেন বলে জানান অ্যাডামস্।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো – এই গ্রীষ্মে নিউইয়র্ক সিটিতে আপনি যেন নিরাপদ ও আনন্দময় সময় কাটাতে পারেন তা নিশ্চিত করা।’