ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শেখ হাসিনার পক্ষে সজীব ওয়াজেদ ১৫ আগস্ট শোক পালন করতে পুরো দেশ থেকে নেতাকর্মীদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানালে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এ আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (আগস্ট ১৫) ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, রাফা প্লাজাসহ আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের শেখ হাসিনা ও সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকাসহ পুরো দেশে সতর্ক অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে, গতকাল বুধবার (১৪ আগস্ট) বিকালে শাহবাগে জড়ো হয়ে রাত থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এর পূর্বে রাত ১১টা থেকেই শিক্ষার্থীরা ধানমন্ডি ৩২ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন।
ধানমন্ডি ৩২ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গাবতলী, মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) ধানমন্ডি ৩২ এলাকার আশপাশের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে জড়ো হন। অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এরিয়ায় অবস্থান নেন।
ঢাবি শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘গণহত্যাকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ ও সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে আমরা অবস্থান নিয়েছি ধানমন্ডি ৩২-এ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান কখনো বিফলে যেতে দেয়া হবে না। রক্তপাত ও প্রতিহিংসা ঠেকাতে রাজপথে অবস্থান করা আমার আপনার সকলের নৈতিক দায়িত্ব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছিল, আওয়ামী লীগের যে কোন ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে ছাত্র সমাজসহ দেশের জনগণ। যে কোনভাবে তাদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে তারা প্রস্তুত।
বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে সমন্বয়ক সারজিস আলম তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থী বন্ধুরা; আজ শাহবাগে দেখা হচ্ছে। রাজপথ শুধু আমাদের দখলে থাকবে।’
বিকালে শাহবাগে জড়ো হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘অধিকার আদায়ে আমরা সব সময় রাজপথে থাকব। ঢাকার সব ছাত্র ও জনতা এক হলে আমরা শহীদদের স্মরণে শাহবাগ থেকে রাপা প্লাজা অভিমুখে পদযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্বলন ও নিহত হওয়ার ঘটনাস্থলে এক মিনিট নীরবতা পালন করে দোয়া করব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান করেছি, এবার সেই গণঅভ্যুত্থান রক্ষা করতে আমরা সবাই জড়ো হয়েছি। এখন থেকে রাজপথ শুধু আমাদের দখলে থাকবে।’
এ সময় পূর্ব ঘোষিত চার দফা দাবির কথাও জানানো হয়। সেগুলো হল ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দল ও সরকার যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে; সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী মহাজোটের শরিক দলগুলোর পরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে; প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বার বার কায়েমের চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও নতুন সরকারে তাদের নিয়োগ বাতিল করে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এত দিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য দ্রুততম সময়ে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।