চট্টগ্রাম: শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দসহ চার দফা দাবিতে চট্টগ্রাম সিটিরি নিউমার্কেট মোড়ে সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে সংগঠনটি। বুধবার (৩১ মে) সকালে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের সহ-সভাপতি রায়হান উদ্দিন, ১১ নম্বর জোন ইনচার্জ ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। সভা পরিচালনা করেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রীতম বড়ুয়া।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১ জুন) প্রতি বছরের মত আমাদের দেশের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রণীত হতে চলেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রিপোর্টে প্রায় সাত লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেটের কথা শোনা গেছে। আইএমএফের ঋণশর্ত, রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থির মধ্যেই এবারের বাজেট প্রণীত হতে চলেছে। লক্ষ্যণীয়, বাজেটের বেশিরভাগ অর্থ জোগান দেয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু, সরকার পরিকল্পনা করে আমলা, কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সাথে। ফলে, বিগত সময় ধরেই আমরা দেখছি, জাতীয় বাজেটে জনগণের স্বার্থ প্রতিফলিত না হয়ে ধনীদের তোষণ করা হয়। তাই, বাজেট কেবল দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। এর মধ্যে সরকাররের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমুল্যের চাপে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের অনিশ্চয়তা বেড়েছে। দেশে সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী প্রায় পাঁচ কোটি। এ বিপুল সংখ্যার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকারি উদ্যোগ খুবই অপ্রতুল। ফলে, প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হয়ে উঠেছে মূলধারা। শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশই পড়াশোনা করে কোন না কোন প্রাইভেট স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশে মানসম্মত পর্যাপ্ত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ফলে, প্রতি বছরের শুরুতেই ভর্তি সংকটের মুখে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা ছাড়াও আর্থিক ব্যয় সংকুলান করতে না পারার জন্য বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতি বছর ঝরে পরে। অথচ, জাতীয় বাজেটের অন্যতম উপেক্ষিত খাতের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। প্রতি বছর সামরিক খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়, এমনকি সারা পৃথিবীর মধ্যে শিক্ষা খাতে ব্যায়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান শেষ দিক থেকে দ্বিতীয়! ফলে, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের সাথে সাথেই বেড়েছে শিক্ষায় ধনী গরিব বৈষম্য। ১৯৯২ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা সংকটের আজো কোন সমাধানের রাস্তা খুঁজে পায়নি সরকার বা প্রশাসন। অথচ, ২৮ লাখ শিক্ষার্থী প্রতিদিন নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের দাবির মুখে ও দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফলে কিছু কিছু কলেজে স্বতন্ত্র পরীক্ষার হল নির্মাণ করা হলেও সেখানে বাস্তবে প্রশাসনিক কাজ ও শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা হয়। শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষার হলের অভাবে ৭০-৮০ দিনের বেশি কোন কলেজেই ক্লাস হয় না।’
‘শিক্ষা জীবন বাঁচাতে তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক সংকট নিরসনে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের শিক্ষা খাতে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। চট্টগ্রামসহ পুরো দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলে হলে দখলদারিত্ব বন্ধ করা কর্তব্য। নতুন নতুন সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে দেশের জনগনের কাছে শিক্ষা আরো সহজলভ্য করা এখন সময়ের দাবি।’
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এরপর নেতারা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল মালেকের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।