শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

শিশুর শীতকালীন যত্ন এবং নেবুলাইজেশন

শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

সুশান্ত বড়ুয়া: আজকাল প্রায় পরিবারে নেবুলাইজেশন মেশিন কমনলি দেখতে পাওয়া যায়। অনেক অভিভাবক শিশুদের কাশির ওষুধ হিসেবে নিজেরাই নেবুলাইজেশন করাচ্ছেন। অথচ কাশির কারণ না জেনে নেবুলাইজ করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি। তার আগে শিশুর শীতকালীন যত্ন সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া যাক।

শিশুর ঠান্ডা যেন না লাগে, সেই জন্য গরম কাপড়ের ভূমিকা সবাই জানে। কিন্তু গরম কাপড়ের যথাযথ ব্যবহার না জানার কারণে হিতে বিপরীত ফল হয়। যেমন- প্রয়োজনোতিরিক্ত কাপড় পেঁচিয়ে শিশুকে ঘামে জবুথবু করে উল্টো ঠান্ডা লাগিয়ে দেয়া- এখান থেকে প্রায় শিশু কমন কোল্ড আক্রমণের শিকার হয়। নিয়মিত স্নান করালে শিশু ও বৃদ্ধ সকলের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। অথচ স্নান করালে ঠান্ডা লাগতে পারে- এ আশংকায় শিশুর স্নান বন্ধ রাখা হয় দিনের পর দিন। ফলে সর্দি-কাশি আরো লেগে থাকে। অতএব জ্বর/সর্দি/মেঘলা যাই হোক, স্নান নিয়মিত করাবেন। প্রয়োজনে কুসুম গরম জ্বলে হলেও ডেইলি স্নান করাবেন। সকাল-সন্ধ্যায় শিশুদের কানটুপি, হাতে পায়ে হালকা মোজা পরাতে হবে। এটাও সবাই করায়। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে ওসব খুলে ফেলতে হয়- এটা ফের ভুল করে অনেকে। আর এটাও একটা ঠান্ডা বা সর্দি কাশি দীর্ঘায়িত হবার কারণ। দেখা যাচ্ছে, সর্দি কাশির ওষুধ চলছেই, কিন্তু কোন কাজে আসে না।

শিশুর মাথার তালুতে সরিষার তেল লাগিয়ে রাখাও ভুল ধারণা থেকে আসা। আগের দিনে লোকজন গোসলের পূর্বে গায়ে সরিষা মাখিয়ে গোসলে নামত, যেন খালবিল নদীর ঠান্ডা পানির ভাব কম লাগে, তথা ঠান্ডা না লাগে। আর তেল ছিল একটাই, সরিষা। ওখান থেকে ধারণা তৈরি হয়ে আছে যে, সরিষা মাখিয়ে রাখলে ঠান্ডা লাগে না। তবে হ্যাঁ, গোসল বা স্নানের পরে শীতকালে গায়ে যে কোন তেল বা লোশন মালিশ করলে ভাল। তবে স্নানের আগে তেল মালিশ নয়। তাতে শরীর তৈলাক্ত হবে, শরীরের ময়লা পরিস্কার হবে না। লোমকূপ বন্ধ হয়ে চামড়ায় এলার্জির সম্ভাবনা থাকে।

নবজাতকের জন্য বিশেষ কিছু পয়েন্ট খেয়াল রাখতে হবে-
মাথা বেল করা না করা নিয়ে: দাদী/নানি হয়তো বলবে, মায়ের পেটের চুল অপবিত্র, ফেলে দাও। কোথাও ২১ দিনে, কোথাও ৪২ দিনে ফেলে দেয়। এটা আস্ত এক কুসংস্কার। বরং মায়ের পেটের চুল তো বেশি পবিত্র, কারণ মায়ের জটর পবিত্র। আর ফেলে দিলে বা ন্যাড়া করলে সাথে সাথে নবজাতকের ঠান্ডা লেগে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে। সে জন্য ন্যাড়া করা নিষেধ। চুল লম্বা হলে ছেটে ছোট করুন। যেন মাথা খানিকটা ঠান্ডা ওয়েদার থেকে রক্ষা পায়।

যেখানে এসি এনভায়রনমেন্ট বা এসি রুম তার তাপমাত্রা ২৪°-২৬° সেলসিয়াস রাখুন। এ তাপমাত্রা হল নয় গরম নয় ঠান্ডা। অনেকে এ জিনিসটা না বুঝে হয় এসি বন্ধ রাখে নতুবা এসি কমানোর নামে তাপমাত্রা কমিয়ে ১৮/২০ করে রাখে অজ্ঞতাবশত। এটাও বুঝিয়ে বলুন বয়স্কদের। না হয় ওনারাই এসি কি জিনিস না বুঝে, একেবার বন্ধ রাখবে। আর নয়তো নন এসি রুমে বেবি রাখুন, ওয়েল ভেন্টিলেটেড রুমে।

নেবুলাইজেশন কখন করবেন: প্রথম কথা হল, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেবুলাইজেশন করা যাবে না। এটি ঘন ঘন শ্বাসটান হলেই কেবল করাবেন চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত নিয়ম মেনে। ফুসফুসে কোন কনজেসশন (congestion) নেই, কেবল কাশি আছে- এ রকম ক্ষেত্রে নেবুলাইজেশনের ভূমিকা খুবই কম। এর সুবিধ হল- সালবিউটামল (Salbutamol) পুরো শরীরে প্রবেশ না করে, কেবল লোকাল এরিয়া তথা ফুসফুস কাজ করে বেরিয়ে আসে। ফলে পুরো শরীরে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া কাজ করে। তবে এর অপ্রয়োজনীয় ও অত্যাধিক ব্যবহার বিপদ ডেকে আনতে পারে। ভাইরাস জনিত শ্বাসকষ্টকে ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণ ঘটিয়ে নিউমোনিয়া করিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কাজেই ইনজুডিশাস (injudicious) নেবুলাইজেশন এড়িয়ে চলুন।

লেখক: চিকিৎসক, ফেনী ডায়বেটি হাসপাতাল