বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি দিয়ে হাইকোর্টের রায়

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ২৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষাসহ সব ফরম পূরণে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মাকেও স্বীকৃতি দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ (এ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট রেজাউল করিম, আইনুন নাহার সিদ্দিকা ও এডভোকেট আয়েশা আক্তার। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।

এডভোকেট আইনুন নাহার সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, পিতৃপরিচয়হীন সন্তান, যৌনকর্মীদের সন্তান, যাদের বাবার পরিচয় নেই, তারা শুধু মায়ের নাম দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবেন। হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। শুধু বাবার নাম না থাকলে একজন শিশু ফরম পূরণ করতে পারবে না, পাসপোর্ট পাবে না, এটা ঠিক না। এটা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে সমতার কারণে বাবা অথবা মায়ের পরিচয় থাকলেই যে কোন ফরম পূরণ বা রেজিস্ট্রেশন পূরণ করার অধিকার পাবে।

তিনি বলেন, ‘আজকের রায়ের ফলে এসএসসি পরীক্ষার ও পাসপোর্টসহ সব ফরম পূরণে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে। এ রায়ের ফলে বাবা-মায়ের উভয়ের নাম লেখার বাধ্যবাধকতা থাকল না। শুধু মায়ের নাম লিখেও ফরম পূরণ করা যাবে।’

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মা স্বীকৃতি পাবেন কি না- বিষয়টি শুনানি শেষে রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য ছিল।

২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ নেয়া আগে শিক্ষার্থী তথ্য ফরমে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাবার নাম পূরণ করতে না পারার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী ঠাকুরগাঁওয়ের এক তরুণীকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রবেশপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মা ও সন্তানকে কোনরূপ স্বীকৃতি না দিয়ে বাবার চলে যাওয়ার পর ওই তরণী তার মায়ের একার আদর স্নেহে বড় হয়েছিলেন। পরে এ ঘটনার যথাযথ অনুসন্ধানের পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ও সন্তানের অভিভাবক হিসেবে মায়ের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট তিনটি মানবাধিকার সংগঠন- বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ যৌথভাবে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৩ আগস্ট হাইকোর্ট মানবাধিকার, সমতার পরিপন্থি ও বিশেষভাবে শিক্ষার অধিকারে প্রবেশগম্যতার বাধাস্বরূপ বিদ্যমান বৈষম্যমূলক এ বিধানকে কেন আইনের পরিপন্থি ও অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না- মর্মে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কারণ দর্শাতে রুল জারি করেন। একইসাথে বর্তমানে কোন কোন শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বাবা ও মা উভয়ের নাম সম্পর্কিত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করতে হয়, তার একটি তালিকা ও যেসব যোগ্য শিক্ষার্থী তাদের বাবার পরিচয় উল্লেখ করতে অপারগ, তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০২১ সালের ৬ জুন ব্লাস্ট আবেদনকারীদের পক্ষে একটি সম্পূরক হলফনামা আদালতে দাখিল করে। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন। সে অনুয়ায়ি মঙ্গলবার রায় দেন হাইকোর্ট।