বিনোদন ডেস্ক: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফির একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘সমকামিতার সমর্থক কাফি’। ওই দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ছবিতে কাফির হাতে এলজিবিটিকিউ+ প্রাইড পতাকার সদৃশ রঙের একটি টুপি দেখা যায় এবং ওই টুপিটির আলোকেই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে ওই দাবিটি সঠিক নয়।
কাফিরিউমর স্ক্যানার জানায়, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি সমকামিতার সমর্থক নন।
তিনি নানা সময়ে সমকামী বিরোধী ভিডিও বানিয়েছেন ও নিজেকে সমকামিতার বিপক্ষের একজন ব্যক্তি বলে দাবি করেছেন। এমনকি রিউমর স্ক্যানার টিমকেও তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া, প্রদর্শিত টুপিটির সাথেও সমকামিতা বা এলজিবিটিকিউ+ এর প্রাইড পতাকার রঙের পার্থক্য রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পোস্টগুলোতে কেবলমাত্র কাফির হাতে থাকা টুপিটির রঙের উপর ভিত্তি করেই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। কাফির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ওই ছবিটি গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) কাফি তার ফেসবুক পেজে ‘একা থাকার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে প্রিয়তমা।’ শীর্ষক ক্যাপশনে পোস্ট করেছিলেন৷ ওই পোস্টটিতে কাফি সমকামিতার বিষয়ে কোনো উল্লেখ করেননি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কাফির হাতে থাকা ওই টুপিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, টুপিটিতে মূলত চারটি রঙ রয়েছে; যা হলো কালো, লাল, হলুদ ও সবুজ।
অপরদিকে, ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোউল্ডারের অন্তর্ভুক্তি ও সামাজিক পরিবর্তন কেন্দ্র এবং হেল্থ নামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, প্রচলিত রেইনবো প্রাইড ফ্ল্যাগে সাধারণত ছয়টি রঙ থাকে। রঙগুলো হল লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, বেগুনি ও নীল বা বেগুনি নীল।
অর্থাৎ, এলজিবিটিকিউ+ এর পতাকাতে কালো রঙ থাকে না কিন্তু কাফির হাতে থাকা টুপিতে কালো রঙ একাধিকবার দেখা যায়। এ ছাড়া, কাফির হাতে থাকা টুপিতে এলজিবিটিকিউ+ এর পতাকাতে থাকা কমলা, বেগুনি ও নীল রঙ দেখা যায়নি যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কাফি’র হাতে থাকা টুপিটি এলজিবিটিকিউ+ এর সমর্থনে প্রচলিত কোনো টুপি নয়।
টুপিটির ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে টুপিটি অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে ‘ইউনিসেক্স জ্যামাইকা রিগেজ ক্যাপ রাস্টা স্লিংকি বিয়ানি মাল্টি-কালার স্ট্রাইপড স্লাচি ব্যাগি বিয়ানি স্কুলিজ গোরু রাস্টা হ্যাট’ শীর্ষক নামে বিক্রি হতে দেখা যায়।
পণ্যের নাম বা বিবরণীতে এটির সাথে সমকামিতার কোনো সম্পৃক্ততা উল্লেখ করতে দেখা যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলে তাকে নানা সময়ে সমকামিতার বিরুদ্ধে কথা বলতে বা ভিডিও বানাতে দেখা যায়। ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারিতে তার ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি ভিডিওতে কাফি’কে বলতে শোনা যায় যে, সমকামী বা সমকামী সমর্থকদের চেয়ে কুকুর ভালো।
সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে গল্পে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে বলে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অভিযোগ করেছিলেন তৎকালীন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব।
২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকার কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক : বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে আসিফ মাহতাব বলেন, ‘সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে।’ এ সময় তিনি এই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তী আসিফকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় চাকরিচ্যুত করেছিল বলে জানা যায়। সেসময়ও কাফি একটি ভিডিও তৈরি করে আসিফ মাহতাবকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়ে আসিফকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্তের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করেন। এ ছাড়াও, আরো নানাসময়ে তাকে সমকামিতা বা ট্রান্সজেন্ডারবিরোধী ভিডিও তৈরি করতে দেখা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে টুপি হাতে কাফির ওই ছবিটি প্রচার করে তাকে সমকামী সমর্থক বলে প্রচার করা হলে তিনি তার ফেসবুক পেজে গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) একটি ভিডিও প্রচার করেন৷ ভিডিওটিতে তিনি সমকামী সমর্থক হওয়ার দাবিটি মিথ্যা বলে জানান।
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম কাফির সাথে যোগাযোগ করলে কাফি জানান, ‘আমি একজন মুসলিম। সমর্থন করার বিষয়ই আসে না। বরং, আমি সমকামিতার বিপক্ষে। আমি এর বিপক্ষে ভিডিও ও বানিয়েছি।’
সুতরাং, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি সমকামিতার সমর্থক শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।