ডেস্ক প্রতিবেদন: জ্বালানি কেনার জন্য সহায়তা হিসেবে পাওয়া প্রায় ৪০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার সাথীরা। মূলত ডিজেল জ্বালানি কেনার জন্য বিদেশি সহায়তার অংশ হিসেবে এ অর্থ ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছিল। পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক সেমুর হার্শের এক রিপোর্টে ভয়াবহ এ দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। খবর তাসের।
সেমুর হার্শ এক রিপোর্টে দাবি করেছেন, ‘ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার সহযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অঘোষিত কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন। এসব অর্থ মূলত জ্বালানি কেনার জন্য ইউক্রেনকে দেয়া হয়েছিল।’
বেশ কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে হার্শ তার রিপোর্টে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও তার সাথীদের অনেকেই ডিজেল জ্বালানি অর্থ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত মার্কিন ডলার থেকে অগণিত মিলিয়ন অর্থ সরিয়ে ফেলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষকদের অনুমান, গেল বছর আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ অন্তত ৪০ কোটি মার্কিন ডলার।’
হার্শের সূত্র অনুসারে, কিয়েভে দুর্নীতির মাত্রা ‘আফগান যুদ্ধের কাছাকাছি, যদিও ইউক্রেন থেকে কোন পেশাদার অডিট রিপোর্ট আসবে না’। এছাড়া হার্শের ওই রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানকে মার্কিন সরকারের চলমান সংকটের জন্য দায়ী করেছে। মূলত হোয়াইট হাউস ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে মত বিরোধের সম্মুখীন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনকে কাড়ি কাড়ি ডলার আর অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো। তবে, এসব অর্থ কোথায় কিভাবে ব্যয় হচ্ছে, তার কোন হিসাব-নিকাশ প্রকাশ করেনি জেলেনস্কি সরকার।
রাজনৈতিক মানচিত্রে এ যুদ্ধ রাশিয়া ও ইউক্রেনে সীমাবদ্ধ থাকলেও অর্থনৈতিক মানচিত্রে তা পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ ইউক্রেনের হাতে নেই। আমেরিকাসহ তার মিত্ররা যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টার বদলে উল্টো নিজেদের স্বার্থে যুদ্ধকে জিইয়ে রাখছে। ইউক্রেনকে যুদ্ধের অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্য- সবকিছু দিয়ে মূলত তারাই পেছন থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।’
ইউক্রেনকে সামনে রেখে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ও আধুনিক সমরাস্ত্র দিচ্ছে। গেল ফেব্রয়ারিতে কিয়েভ সফরকালে ইউক্রেনের জন্য আগের সাহায্যের অতিরিক্ত আরো প্রায় ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত এক বছরে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে, তার সাথে এটা নতুন সংযুক্তি।
শুধু ২০২২ সালেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ (কংগ্রেস) ইউক্রেনের জন্য ১১২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার অনুমোদন দেয়। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অর্থদাতা। যুদ্ধে এত খরচের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের। বিদেশি রাষ্ট্রের পেছনে সরকারের এত ব্যয়ে চিন্তিত অনেকেই। তারা জানতে চাইছেন, এ টাকা কোথায় কোথায় ব্যয় হচ্ছে ও সহায়তা দানের মূল্যই বা কত হবে।