ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ একজন নিহত হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকার সংঘর্ষে আহত হয়েছেন সাংবাদিক ও পুলিশসহ শতাধিক।
দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে শোভাযাত্রা বের করতে গেলে পুলিশ বাধা দিলে এক পর্যায়ে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে দেখা যায় বিএনপির কর্মীদের। অন্য দিকে, পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করে। সংঘর্ষে নিহত হন ২৪ বছর বয়সি শাওন। তার মৃত্যুর খবর গণ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডিউটি অফিসার নাজমুল হোসেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন বিপুল বলেন, ‘শাওন প্রধান নামের ২০ বছর বয়সি ওই যুবকের বুকে ‘গুলির চিহ্ন’ রয়েছে। ‘হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরো ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’ নিহত শাওন ফতুল্লার পঞ্চবটি নবীনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে। তিনি যুবদলের কর্মী বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা।
জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোহাম্মদ রাসেল বলেন, `তারা কোন ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়াই সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিলেন। তাতে বাধা দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।’ এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো হয় জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ছুঁড়ে।’
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
মানিকগঞ্জে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটনায় ইটপাটকেলের আঘাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকারসহ তিন পুলিশ সদস্য ও দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির তিন জনকে আটক করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১১টার দিকে শহরের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের উত্তর সেওতা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে খালপাড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালে এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে। এতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।
এরপর পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করলে এক পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে ইটপাটকেলের আঘাতে সদর থানার ওসি আবদুর রউফ সরকার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, মো. শাহীন ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি আরএস মঞ্জুর রহমান ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি সাজেদুর রহমান আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবীর বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে পুলিশ অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে। পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেলে দলের ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ভাস্কর সাহা বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
সদর থানার ওসি বলেন, ‘আহত দুই কনস্টেবলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তিনিও আহত হয়েছেন।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় ।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘এ ঘটনায় আমিসহ আরো একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে অনুমতি ছাড়া মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরে পুলিশ টিআর শেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তবে, বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের কথা রয়েছে।
কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় লাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেনসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম বলেন, ‘আজ সকালে বিএনপির পূর্বঘোষিত জনসভা ছিল নাঙ্গলকোটে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা নাঙ্গলকোট সদর বাজারে (লোটাস চত্বরে) অবস্থান নেন। অপর দিকে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন এলাকায়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।’
এ ঘটনায় ওসি ফারুক হোসেনসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কানন চৌধুরী।
পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম জানান, আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সে সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে লাঙ্গলকোট এআর উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
নেত্রকোণার মদন উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।