চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই) দুই দিনের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং, ডিজক্লোজার এন্ড অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডের উপর হ্যান্ডস-অন কর্মশালা সম্পন্ন করেছে। ৯-১০মার্চ এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় বিএসইসি, সিএসই এবং ডিএসইর ৩০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।
সিএসই নিয়মিত সংশ্লিষ্ট স্টেকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট প্রস্তুতির প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিএসইর চট্টগ্রামস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম, চিফ একাউটেন্ট মো. কামরুল আনাম খান, পরিচালক মো. আবুল কালাম, হোদাভাসি চৌধুরী এন্ড কোম্পানি চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ফার্মের পার্টনার শেখ মো. তারিকুল ইসলাম ও শেখ হাসিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার, চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) মোহাম্মদ মাহাদি হাসান।
স্বাগত বক্তব্যে এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টং প্রস্তুত ও এর সঠিক বিশ্লেষণ করা হচ্ছে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। রিপোর্ট তৈরির স্ট্যান্ডার্ডগুলোর পরিবর্তন কিংবা সংযোজন হয়। স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর জন্য ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট নিয়ে কাজ করা হল একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। কেননা নতুন নতুন বহু কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হচ্ছে ও দিন দিন আগ্রহ আরো বাড়ছে। এসব কোম্পানিগুলোকে তাদের ধরন অনুযায়ী ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক- এ তিন পর্বে রিপোর্ট দিতে হয় এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও একই সঙ্গে বিএসইসিকে সব মিলিয়ে সারা বছরে প্রায় এক হাজারটি রিপোর্ট গ্রহণ করতে হয়। শুধু তাই নয়, এরপর সে রিপোর্টগুলোর যথাযথ বিশ্লেষণ করে ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। কারণ, একটি ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্টের সাথে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ চিন্তা সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর বা রেগুলেটরের একটি ভুল পর্যালোচনা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। তাই, আমাদেরকে এ ফিনান্সিয়াল রিপোর্টংয়ের বিশ্লেষণ, এর উপস্থাপন ও পরবর্তী তথ্য প্রদানের বা ব্যবস্থা গ্রহণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি এমনভাবে করতে হবে, যেন বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো দৃঢ় হয় ও বিনিয়োগ চিন্তা সঠিক হয়। এ ধরনের প্রশিক্ষণ একটি গতিশীল ও জবাবদিহিমূলক পুঁজিবাজার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজারের আকার বেশ ছোট। কিন্তু, কাজের পরিধি কম নয়। পুঁজিবাজারে আছে প্রায় ৩৫০টির উপরে প্রতিষ্ঠান, যারা বহু ধরনের রিপোর্ট দেয়। এ ক্ষেত্রে, রিপোর্ট বিষয়ক প্রথম কাজটি হচ্ছে সব কোম্পানিগুলোর রিপোর্ট ঠিকমত পাঠায় কিনা, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এরপর দেখতে হবে প্রদত্ত রিপোর্টগুলো ঠিকমত তৈরি করেছে কিনা এবং এর ব্যবহার ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও সাবধান হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুঁজিবাজারের এ রিপোর্টগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলিকে আইন অনুযায়ী স্বচ্ছ ও দক্ষ হিসেবে তৈরি করা। রেগুলেটর মানে কেবল নিয়ন্ত্রণ করবে, তেমনটা নয়। আমাদের এটাও খেয়াল করতে হবে যে, আমরা এমনভাবে গাইড করব যেন তারা তাদের সমস্যার সমাধান করে একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিনিয়োগকারীদের কাছে স্থান পায় ও তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আরো নতুন নতুন কোম্পানি আমাদের পুঁজিবাজারে আসে। আরো মনে রাখতে হবে- এটি এমন নয় যে, এক বার করেই শেষ হবে, পর্যবেক্ষণ ও উন্নতিকরনের ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে এবং সামনের পথচলা যেন যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ও মসৃণ হয়।’
মোহাম্মদ মাহাদি হাসান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের ফিনান্সিয়াল মার্কেটে বহু সীমাবদ্ধতা আছে, তাও আমারা যতখানি এগিয়েছি, তা বেশ উল্লেখযোগ্য। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে সিএসই, ডিএসই এবং বিএসইসির মধ্যকার সমন্বয়ে এ কর্মশালাটি আয়োজন করার ফলে কাজের সম্মিলিত আরো কার্যকরী ফলাফল আমারা সামনে দেখতে পাবো। রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, ২০০৮ সালের পর থেকে ফিনান্সিয়াল টেরোরিজম শব্দটি প্রচলিত; যার উদ্ভূত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এর প্রভাব সুদূর প্রসারী। তাই, ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং তৈরি করা এবং এর ব্যবহার, পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জ্ঞান আরো বাড়াতে হবে। মূলকথা সব সময় নিজেকে ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ বা জিজ্ঞাসার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলো জেনে নিতে হবে ও সঠিক ব্যবহার করতে হবে।’
প্রশিক্ষণ বা ওয়ার্কশপ সব সময়ই নতুন নতুন পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংযোজন সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারণা বা ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের কাজের পরিধিতে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। একই সাথে তাদের চিন্তা ও বিশ্লেষণ বা আগামী সংযোজনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মতামতগুলোও দিতে পারেন। এছাড়াও, হাতে কলমে শিক্ষার মাধ্যমে সঠিকভাবে সঠিক রিপোর্ট তৈরির ধাপগুলোও জেনে নিতে পারেন। তাই, কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা এ ধরনের আরো প্রশিক্ষণের আয়জনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।