স্টারবেস, যুক্তরাষ্ট্র: স্টারশিপের প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের উৎক্ষেপণের জন্য বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সময় পুনঃনির্ধারণ করেছে স্পেসএক্স। চাঁদ, মঙ্গল ও তার বাইরে নভোচারীদের পাঠানোর জন্য ডিজাইন করা এ রকেট এখনো পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট, একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বাধ্য হয়ে সোমবার (১৭ এপ্রিল) এটির উৎক্ষেপণ বাতিল করে সময় পুননির্ধারণ করা হয়েছে।
স্পেসএক্স জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ের বুস্টারে চাপের সমস্যার কারণে নির্ধারিত লঞ্চের দশ মিনিটেরও কম সময় আগে বিশাল এ রকেটের উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়।
বেসরকারী মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্স কোম্পানি কাউন্টডাউন চালিয়েছিল যাকে ‘ওয়েট ড্রেস রিহার্সাল’ বা উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত মুহূর্তে বুস্টারের বিশাল ইঞ্জিনগুলো জ্বালানোর ঠিক আগে ঘড়ির কাঁটা দশ সেকেন্ড যেতেই উৎক্ষেপণ থামিয়ে দেয়া হয়।
স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘একটি হিমায়িত চাপ ভালভ লঞ্চটিকে স্ক্রাব করতে বাধ্য করেছে, এটি টেক্সাসের বোকা চিকার স্পেসএক্স স্পেসপোর্ট স্টারবেস থেকে সেন্ট্রাল টাইম ৮:২৮ (১৩২০ জিএমটি) এ উৎক্ষেপণের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’
মাস্ক টুইট করেছেন, ‘আজ অনেক কিছু শিখেছি, এখন প্রোপেল্যান্ট আফলোড করা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে ফের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) লিফটঅফের জন্য নতুন লক্ষ্য ঘোষণা দেয়ার আগে, স্পেসএক্স বলেছিল যে রকেটের জ্বালানি তরল মিথেন ও তরল অক্সিজেন পুনর্ব্যবহার করতে উদ্বোধনী ফ্লাইটটি কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা বিলম্বিত হবে।
স্পেসএক্স টুইটারে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সেন্ট্রাল টাইম সকাল আটটা ২৮ মিনিটে (১৩২৮ জিএমটি) নতুন লঞ্চ উইন্ডোটি খোলা কবে ও ৬২ মিনিট স্থায়ী হবে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর প্রথম বারের মত ২০২৫ সালের শেষের দিকে মহাকাশচারীদের চাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্টারশিপ মহাকাশযান বেছে নিয়েছে। এটি মিশন আর্টেমিস-৩ নামে পরিচিত হবে।
স্টারশিপ একটি ১৬৪-ফুট (৫০-মিটার) লম্বা মহাকাশযান নিয়ে গঠিত যা ক্রু ও পণ্যসম্ভার বহন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি ২৩০ ফুট লম্বা প্রথম পর্যায়ের সুপার হেভি বুস্টার রকেটের উপরে স্থাপন করা হয়েছে।
স্পেসএক্স ফেব্রুয়ারিতে প্রথম পর্যায়ের বুস্টারে ৩৩টি র্যাপ্টর ইঞ্জিনের একটি সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। কিন্তু, স্টারশিপ মহাকাশযান এবং সুপার হেভি রকেট কখনো একসাথে উড়েনি।
ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট ফ্লাইটের উদ্দেশ্য হল তাদের পারফরম্যান্সের সমন্বয়ে মূল্যায়ন করা।
মাস্ক লঞ্চের আগে সতর্ক করেছিলেন যে বিলম্ব হতে পারে।
এর আগে তিনি বলেছেন,‘এটি খুব ঝুঁকি পূর্ণ ফ্লাইট’। ‘এটি অত্যন্ত জটিল বিশালাকার রকেটের প্রথম উৎক্ষেপণ।’
নাসা তার নিজস্ব ভারী রকেট স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) ব্যবহার করে ২০২৪ সালের নভেম্বরে চন্দ্রের কক্ষপথে মহাকাশচারীদের নিয়ে যাবে, যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে।
স্টারশিপ এসএলএসের চেয়ে বড় এবং আরো শক্তিশালী এবং এটি কক্ষপথে ১০০ মেট্রিক টনের বেশি লোড তুলতে সক্ষম। এটি ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড থ্রাস্ট তৈরি করে, অ্যাপোলো মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত স্যাটার্ন ভি রকেটের দ্বিগুণেরও বেশি।
ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট ফ্লাইটের পরিকল্পনা হল সুপার হেভি বুস্টার লঞ্চের প্রায় তিন মিনিট পর স্টারশিপ থেকে আলাদা হয়ে মেক্সিকো উপসাগরে খসে পড়ে।
স্টারশিপ, যার নিজস্ব ছয়টি ইঞ্জিন রয়েছে, প্রায় ১৫০ মাইল উচ্চতায় চলতে থাকবে, উৎক্ষেপণের প্রায় ৯০ মিনিট পরে প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণের আগে পৃথিবীর কাছাকাছি একটি বৃত্ত ঘূণন সম্পন্ন করবে।
ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘যদি এটি কক্ষপথে যায়, তবে এটি হবে একটি বিশাল সাফল্য।’
স্পেসএক্স শেষ পর্যন্ত একটি স্টারশিপকে কক্ষপথে স্থাপন করার পূর্বাভাস দেয় ও তারপরে এটিকে অন্য স্টারশিপ দিয়ে রিফুয়েল করা যাবে, যাতে এটি মঙ্গল গ্রহে বা তার বাইরে যাত্রা চালিয়ে যেতে পারে।
মাস্ক বলেছিলেন, ‘লক্ষ্য হল স্টারশিপকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ও প্রতি ফ্লাইটের দাম কয়েক মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা।’
মাস্ক বলেন, ‘শেষ উদ্দেশ্য হল চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে ঘাঁটি স্থাপন করা এবং মানুষকে ‘একটি বহু-গ্রহের সভ্যতার পথে নিয়ে যাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সভ্যতার এ সংক্ষিপ্ত মুহুর্তে আছি; যেখানে বহু-গ্রহের প্রজাতি হওয়া সম্ভব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি মনে করি, আমরা একটি সুযোগ পেয়েছি।’