/ 
প্রিন্ট করুন
আফতাব আহমেদ: স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে পরাশোনা শেষ করার পর চাকুরীর মাধ্যমে নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (এইচ১বি) এবং গ্রীণ কার্ড দুইটই পাওয়া যায়। এইচ১বি নিয়ে বিগত সময়ে আলোচনা করেছি। আজ চাকুরীর মাধ্যমে গ্রীন কার্ড ইবি১, এবি২, এবি৩ এবং এবি৪ প্রাপ্তির দিকগুলো নিয়ে আলোকপাত করব। আপনার যদি সঠিক দক্ষতা, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকে, তবে আপনিও চাকুরীর মাধ্যমে গ্রীণ কার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে পারেন।
ইবি১: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য অগ্রাধিকার কর্মী (প্রায়োরিটি ওয়ার্কার) হিসেবে বিজ্ঞান/আর্টস/শিক্ষা/ব্যবসায়/এ্যাথলেটিক্সে আসাধারণ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি; কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে- এমন অসামান্য প্রতিভা সম্পন্ন অধ্যাপক/গবেষক এবং পরিচালনা ও কার্যনির্বাহী ভূমিকায় (ম্যানেজারিয়াল ও এক্সিকিউটিভ ক্যাপাসিটিতে) যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কোন কোম্পানিতে কম্পক্ষে এক বছর চাকুরীর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি ওই একই কোম্পানি অথবা তার কোন ব্রাঞ্চ, জয়েন্ট ভেনচার, এফিলিয়েট কোম্পানির বহুজাতিক ব্যবস্থাপক ও কার্যনির্বাহী (মাল্টিন্যাশনাল ম্যানেজার ও এক্সিকিউটিভ) ব্যক্তি ইবি১ ক্যাটাগরীতে গ্রীণকার্ড পেতে পারে।
ইবি২: যে তিনটি ক্যাটাগরীতে ইবি২ গ্রীণকার্ডের যোগ্যতা নির্ধারিত হয় সেগুলো হল- যুক্তরাষ্ট্রের স্নাতক ও এর সমমান ডিগ্রী পরবর্তী কম্পক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে- এমন অথবা অভিজ্ঞতা ছাড়া স্নাতোকত্তোর/পিএইচডি/জেডি/এমডির মত অ্যাডভান্সড ডিগ্রী রয়েছে- এমন ব্যক্তি; বিজ্ঞান/আর্টস/ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অসাধারণ সামর্থ্য (এক্সেপশনাল অ্যাবিলিটি) রয়েছে- এমন ব্যক্তি এবং জাতীয় স্বার্থে ছাছের (ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েইভার) আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে- এমন পেশায় বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি। ইবি২ গ্রীনকার্ড ধারীর স্পাউস ইবি২১ ক্যাটাগরীতে ও তার ২১ এর কম বয়সী সন্তান ই২২ ক্যাটাগরীতে একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবে।
ইবি৩: ইবি৩ গ্রীণকার্ডের যোগ্যতার মানদণ্ডগুলো হল- কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে- এমন দক্ষ কর্মী (স্কিল্ড ওয়ার্কার); কমপক্ষে যক্তরাষ্ট্রের স্নাতক ও এর সমমান ডিগ্রী রয়েছে- এমন পেশাদার (প্রফেশনাল) এবং অদক্ষ কর্মী (আনস্কিল্ড ওয়ার্কার)। দক্ষ কর্মী ও পেশাদার ক্যাটাগরীর ইবি৩ গ্রীণকার্ড ধারী ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রী ই৩৪ ক্যাটাগরীতে ও ২১ এর কম বয়সী সন্তান ই৩৫ ক্যাটাগরীতে আর অদক্ষ কর্মী ক্যাটাগরীর গ্রীণকার্ড ধারী ব্যাক্তির স্বামী/স্ত্রী ইডব্লিউ৪ ক্যাটাগরীতে এবং ২১ এর কম বয়সী সন্তান ইডব্লিউ৫ ক্যাটাগরীতে একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবে।
ইবি৪: যে সব ক্যাটাগরীতে ইবি৪ গ্রীণকার্ড পাওয়া যায়, তার মধ্যে বাংলাদেশিদের মধ্যে পরিচিত ও প্রচলিত দুটি ক্যাটাগরী হল- যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোন অলাভজনক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী দুই বছর আর১ ভিসা নিয়ে অথবা রিলিজিয়াস নন-ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার হিসেবে সপ্তাহে কম্পক্ষে ৩৫ ঘন্টা কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে অথবা এসডি ক্যাটাগরীতে রিলিজিয়াস ইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার হিসেবে এবং অপব্যবহার, বিসর্জন অথবা অবহেলার (অ্যাবিউস, অ্যাবান্ডনমেন্ট অথবা নেগলেক্ট) কারণে পিতামাতার সাথে পুনরায় একত্রিত হতে পারবে না- এ মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন স্টেট কোর্টের অর্ডার রয়েছে- এমন ২১ এর কম বয়সী অবিবাহিত বিশেষ অভিবাসী কিশোর (স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট জুভেনিল বা এসআইজে)।
শ্রম ছাড়পত্র: উপরে বর্ণিত ইবি১ এর তিনটি ক্যাটাগরী এবং ইবি২ এর ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েইভার ক্যাটাগরী বাদে ইবি২ এর অপর দুইটি এবং ইবি৩ এর তিনটি ক্যাটাগরীতে আপনাকে প্রথমে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরীর অফার পেতে হবে। তবে, অফার দেয়ার আগে কোড অব ফেডারেল রেগুলেশন্স ২০ সিএফআর ৬৫৬.১৭ এর আওতায় ওই মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে আপনার জন্য দিয়ে শ্রম অধিদপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অব লেবার) থেকে শ্রম ছাড়পত্র (লেবার সার্টিফিকেশন) নিতে হবে। আপনার এমপ্লয়ারকে নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট জব পজিশনের জন্য প্রযোজ্য প্রিভেইলিং ওয়েজ ডিটারমিনেশন (পিডব্লিউডি) নিতে হবে। এরপর এমপ্লয়ারকে স্টেট ওয়ার্কফোর্স এজেন্সীতে একটানা ৩০ দিনের জন্য জব অর্ডার প্লেস করতে হবে, চাকুরির এলাকায় রোববার প্রকাশিত হয় এমন দুটি পত্রিকাসহ কোম্পানির ওয়েবসাইটে, জব ফেয়ারে, এমপ্লয়ি রেফারেল প্রোগ্রামে, জব সার্চ ওয়েবসাইটে, রেডিও/টেলিভিশনে ইত্যাদি যে কোন তিনটি ভিন্ন মাধ্যমে যে কোন মেয়াদের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে হবে। আগ্রহী সব প্রার্থীর বায়োডাটা রিজার্ভ করতে হবে, বাছাইকৃতদের ইন্টারভিউ নিতে হবে ও যাদের বাদ দেয়া হল, তাদের বাদ দেয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি রিক্রুটমেন্ট রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এমপ্লয়ারকে এ বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে একটি পোস্টিং নোটিশ কম্পক্ষে দশ দিন তার ওয়ার্ক প্লেসে রাখতে হবে এবং পোস্টিং নোটিশটি নামিয়ে ফেলার পর কত জন আগ্রহী প্রার্থী আবেদন করেছেন, সেই সংক্রান্ত একটি নোটেশন টানিয়ে রাখতে হবে। পোস্টিং নোটিশ নামিয়ে ফেলার অথবা স্টেট ওয়ার্কফোর্স এজেন্সীতে প্লেস করা জব অর্ডার শেষ করার সর্বনিম্ন ৩০ দিন পর এবং যে কোন একটি রোববারের বিজ্ঞাপন প্রকাশের সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের আগে এমপ্লয়ারকে অনলাইনে ইটিএ ফর্ম ৯০৮৯ জমা দিয়ে ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের অধীনে এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ট্রেইনিং এডমিনিস্ট্রেশন থেকে পারমানেন্ট লেবার সার্টিফিকেশন নিতে হবে। ইবি১, ইবি৪ আর ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েইভারের ক্ষেত্রে আপনি নিজেই আবেদন করতে পারবেন, আপনার এমপ্লয়ারের আপনার জন্য আবেদন করার অথবা লেবার সার্টিফিকেশন নেয়ার প্রয়োজন হবে না।
কিভাবে আবেদন করবেন: ইবি২ এবং ইবি৩ এর ক্ষেত্রে আপনার এমপ্লয়ার লেবার সার্টিফিকেশন পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ও ইবি১ এর ক্ষেত্রে যে কোন সময় ৭০০ ইউএস ডলার ফি দিয়ে ফর্ম আই-১৪০, ইমিগ্র্যান্ট পিটিশন ফর এ্যালিয়েন ওয়ার্কার আর ইবি৪ এর জন্য যে কোন সময় ৪৩৫ ইউএস ডলার ফি দিয়ে ফর্ম আই-৩৬০, পিটিশন ফর এ্যামেরেশিয়ান, উইডোয়ার অর স্পেশাল ইমিগ্র্যান্ট জমা দিতে হবে। এ ক্যাটাগরিগুলোতে ভিসা বুলেটিন অনুযায়ী, গ্রীন কার্ড চলমান বা কারেন্ট হওয়ার পর আপনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে বৈধভাবে থাকলে এক হাজার ২২৫ ইউএস ডলার ফি দিয়ে ফর্ম আই-৪৮৫, অ্যাপ্লিকেশন টু রেজিস্টার পার্মানেন্ট স্ট্যাটাস অর এ্যাডজাস্ট স্ট্যাটাস জমা দিবেন আর বাইরে থাকলে ফর্ম ডিএস-২৬০, অনলাইন ইমিগ্র্যান্ট ভিসা অ্যান্ড এলিয়েন রেজিস্ট্রেশন এ্যাপ্লিকেশন জমা দিবেন ও ১৬০ ইউএস ডলার ইমিগ্র্যান্ট ফি দিবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে প্রবেশের পর অনুমদিত মেয়াদের পরও ওভারস্টে করলে আপনি উপরে বর্ণিত একটি ক্যাটাগরীতেও গ্রীণকার্ডের জন্য বিবেচিত হবেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ আর্টিকেল কোন রকম আইনী পরামর্শ নয়। এটি কেবলমাত্র ইউএসসিআইএস এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত এ সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র।
লেখক: ব্যারিস্টার-এট-ল, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী, যুক্তরাষ্ট্র
ইমেইল: expa.expe@gmail.com
