মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী: শেষ নবী হযরত মোহাম্মদের (সা.) প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠানো তার সব উম্মত তথা নারী ও পুরুষের জন্য হবাঞ্ছনীয়। তার ওপর দরুদ পাঠ করতে স্বয়ং আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) স্বয়ং ও আমার ফেরেশতারা তার (রসুল) ওপর দরুদ পড়ে সালাম পাঠিয়ে থাকি, হে মুমিনরা! তোমরাও তার ওপর দরুদ পড় ও সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব-৫৬)।
এ নির্দেশনানুযায়ী, সব মুমিন নারী-পুরুষের ওপর নবীজির প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ সাব্যস্ত হয়েছে। পবিত্র কোরআন ছাড়াও হাদিসে দরুদ শরিফ পড়ার বিশেষ কদর বা গুরুত্ব ও ফজিলতের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
দরুদ পড়লে অশেষ সওয়াব, রহমত, বরকত ও মাগফেরাত পাওয়া যায়। প্রিয় নবীর প্রতি মহব্বত নিয়ে দরুদ পড়া উত্তম ইবাদত। বিশ্বনবী তার উম্মতকে তার প্রতি দরুদ পড়ার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পেয়ারা নবীর নাম শোনার পর যে উম্মত তার প্রতি দরুদ পাঠ করা থেকে বিরত থাকবে, তাকে বখিল ও কৃপণ বলে ভর্ৎসনা করেছেন।
তাই, মুসলিম ফেকাহবিদরা বলেন, ‘জীবনে এক বার প্রতিটি মুসলিমের জন্য নবীজির নাম শুনে বা উচ্চারণ করে তার প্রতি দরুদ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পড়া ফরজ, কোন মাহফিলে নবীজির নাম শুনে প্রথম বার দরুদ পড়া ওয়াজিব ও পরে বার বার তার নাম শুনে দরুদ পড়া মুস্তাহাব ও উত্তম সওয়াবের কাজ।
যদি এক বারও না পড়ে তাহলে, সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। তাই, নবীজির নাম শুনে কোন মাহফিলে সকলের উচ্চৈঃস্বরে দরুদ পড়ার উচিত; যাতে ভুলে যাওয়া শ্রোতামণ্ডলীর সবাই দরুদ আদায় করে নিতে পারে। হাদিসশাস্ত্রের ছাত্ররা হাদিসের কিতাব পড়ার সময় নবীজির নাম শুনে সবাই উচ্চৈঃস্বরে দরুদ পড়ে থাকেন। দরুদের সুমধুর উচ্চ আওয়াজে দরসগাহ বার বার গুঞ্জরিত হয়।
কেননা যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণ দরুদ পড়বে, সে ব্যক্তি আল্লাহর খাস বান্দা ও নবীজির সৌভাগ্যবান উম্মত হিসেবে পরিগণিত হবে। পৃথিবীর স্বপ্নযোগে প্রিয় নবীর দিদার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে ও আখেরাতে তার শাফায়াতলাভে ধন্য হবে।
নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর এক বার দরুদ পড়বেম, আল্লাহ তার ওপর দশ বার রহমত বর্ষণ করেন।’ (মুসলিম) নবীজি বলেন, ‘যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয়, সে যেন তৎক্ষণাৎ আমার ওপর দরুদ পড়ে।’
হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দার দোয়া, মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝোলানো থাকে, তার কোন কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না ও কবুল হয় না, যতক্ষণ না প্রিয় নবীর প্রতি দরুদ পড়ে।’ (তিরমিজি)।
যে ব্যক্তি নবীর প্রতি দরুদ পড়বে, আল্লাহ তাকে দশটি মর্যাদা দান করেন, দশটি নেকি দান করেন ও দশটি গুনাহ মাফ করে দেন। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি বেশি পরিমাণ দরুদ পড়বে, কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের অন্ধকারে আলোকময় হবে ও কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশের কাছাকাছি হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর সেই বৈঠকে আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তার ৮০ বছরের সগিরা গুনাহ মওকুফ করে দেবেন।’
নবী (সা.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি মহব্বতের সাথে দরুদ পড়বে, তার বিনিময়ে আল্লাহ এমন একজন বিশাল আকৃতির ফেরেশতা তৈরি করে দেন, যে দরুদ পাঠকারীর ওপরে কেয়ামত পর্যন্ত রহমত ও মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকবে।’
যে ব্যক্তি মহব্বতের সাথে নবীর প্রতি দরুদ পড়বে, আল্লাহ পৃথিবীর সব পেরেশানি দূর করে দেবেন। রিজিকে বরকত দান করবেন, ইজ্জত-সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন, শান্তি ও নিরাপত্তা দান করবেন, সব আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে দেবেন ও আল্লাহ প্রিয় নবীর অসিলায় তার উম্মতের সব দোয়া ও ইবাদত কবুল করে নেবেন।
প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, ‘যখন আমার কোন উম্মত মহব্বতের সাথে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে আমার প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠায়, তখন আল্লাহর নিযুক্ত এক দল নুরের ফেরেশতা সেই উম্মতের পাঠানো দরুদ ও সালাম পাঠকারীর নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা ও পরিচয়সহ আমার কাছে পৌঁছে দেয়।’ সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং, যার অসিলায় কুল-কায়িনাত সৃষ্টি হয়েছে, আপনার আমার এ দুনিয়াতে আসার সৌভাগ্য হয়েছে, সেই মহামানবের (সা.) প্রতি ভালবাসা ও মহব্বতে দরুদ সালাম পেশ করে পৃথিবী ও আখেরাতের জীবনে আমরা ধন্য হই। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন।
লেখক: ইমাম ও খতিব, কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা