নয়া দিল্লী, ভারত: শেখ হাসিনা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের ও দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয় বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে ভারত। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকায় ভারত খুশি নয় এবং এই বার্তা যুক্তরাষ্ট্রকেও পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মত ভারতও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
আর তিন সপ্তাহ পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
তার আগে ভারতের এই বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
সাউথ ব্লক (ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান) মনে করে, জামায়াতে ইসলামীকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দেয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। উদার পরিবেশ যেটুকু রয়েছে, তা-ও আর থাকবে না।
ভারত মনে করে, বাংলাদেশে হাসিনার সরকার দুর্বল হলে তা ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভাল হবে না।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভারত একাধিক স্তরের বৈঠকে বাইডেন প্রশাসনকে এ তথ্য জানিয়েছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তালেবান এখন আফগানিস্তানের ক্ষমতার শীর্ষে।
মনে করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের কথা বিবেচনা না করেই যুক্তরাষ্ট্র একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চুক্তি করেছিল ও এখন যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, আফগানিস্তানের পাশাপাশি ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশী সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও নয়াদিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত রয়েছে। ফলে, সে দেশের যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি ভারতেও প্রভাব ফেলে।
নয়াদিল্লি বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে, জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে ভারতের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়তে পারে ও বাংলাদেশে চীনের প্রভাব অনেক বেড়ে যাবে; যা যুক্তরাষ্ট্রের কাম্য নয়।
মনে করা হচ্ছে, জামায়াতকে বরাবর একটি রাজনৈতিক ইসলামিক সংগঠন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র।
জামায়াতকে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে তুলনা করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাস্তবে, জামায়াত যে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন ও পাকিস্তানের হাতে তামাক খায়, এ বিষয়ে নয়াদিল্লি নিঃসন্দেহ।
বাইডেন প্রশাসন শুধু বাংলাদেশের জন্য পৃথক ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নয়াদিল্লি এটাকে মোটেও ন্যায়সঙ্গত মনে করে না।
নতুন এই ভিসা নীতির ফলে যারা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অধিকার পাবে না।
কূটনৈতিক শিবির মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাতেই নিজের দেশের আইন প্রয়োগ করে সে দেশের জন্য পৃথক ভিসা নীতি গ্রহণ প্রণয়ন করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নয়াদিল্লি সফর করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করেছে। সেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপজ্জনক বলেও বার্তা দিয়েছেন তারা।
প্রতিনিধি দলের নেতা কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে একটি ইতিবাচক বৈঠক করেছেন।
ওই বৈঠকের পরপরই তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে বলেছি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উভয় রাষ্ট্রের জন্যই জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, বাংলাদেশের মাটিকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।’