ঢাকা: ২০২২ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় দশ হাজার ১০৮ জন নিহত এবং ৫৬ হাজার ৯৬৭ জন আহত হয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে নৌ, রেল ও সড়ক পথে ১৫১টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৫৬ জন ও নিহত হয়েছেন ২৭ জন। পুরো বছরে নৌ, রেল ও সড়ক পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৫ হাজার ৩০৫ আর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেললে এ তথ্য জানিয়েছে সেভ দ্য রোড।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব শান্তা ফারজানা বলেন, ‘স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি- ২০২২ এ আকাশ পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটে নি; যা আমাদের জন্য সুখকর। আমরা আশা করব, এভাবেই বাংলাদেশের আকাশপথ থাকবে দুর্ঘটনামুক্ত অবিরাম। আকাশ পথের কথা সুখকর হলেও দুঃখকর কথা হল, নৌ-রেল ও সড়কপথ দুর্ঘটনায় আমরা যে স্বজন-প্রিয়জনদেরকে হারিয়েছি, চলতি বছরে; তাদের জন্য দোয়া-প্রার্থনা ও শ্রদ্ধাঞ্জলীর পাশাপাশি সরকার-বীমা ও মালিক শ্রেণির কাছে সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে একটা দাবি বরাবরের মত আজো জানাচ্ছি। আর তা হল- পথ দুর্ঘটনায় আহতদেরকে তিন লক্ষ ও নিহতদের পরিবারকে দশ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যাতে করে অপূরণীয় এ ক্ষতি কিছুটা হলেও সামলে নিতে পারে স্বজন-প্রিয়জন হারানো পরিবারটি; একই সাথে ঘুরে দাঁড়াতে পারে আহত ব্যক্তিটি ও তার পরিবার। এ বছরের পথ দুঘটনায় নিহত দশ হাজার ১০৮ জনের মধ্যে আমরা ৭৪ জন চালক, ৩৮ জন চালকের সহযোগি, ৪ হাজার ২২ জন নারী, এক হাজার ১২ জন শিশু, ৮১২ জন শিক্ষার্থী, আটজন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ২৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্য, ৫৬ জন রাজনৈতিক নেতা হারিয়েছি।’
সেভ দ্য রোডের চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাজী সেলিম সরোয়ার, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, আইয়ুব রানা, জিয়াউর রহমান জিয়া, সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল মল্লিক, বাংলাদেশ টুডের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মো. সায়মুন ইসলাম, কায়েস সজিব, ভারতের দানবীর সেখ সহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘রাজধানীসহ পুরো দেশে তীব্র গণ পরিবহন সংকট, অন্য দিকে, ফিটনেস বিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ বাস-টেম্পুর অবাধ চলাচলের কারণেও যাচ্ছে প্রাণ। এমন পরিস্থিতির উত্তরণে সেভ দ্য রোড সাতটি দাবি নিয়ে এগিয়ে চলছে। এগুলো হল- বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবল খেলা শেষে বাড়িতে পাওয়ার পথে মিরসরাইতে নিহত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে স্মরণিয় করে রাখতে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করা; ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দেয়া; সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ ও কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া; স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে দশ লাখ ও আহতদের তিন লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দেয়া ও হতাহতদের ইন্স্যুরেন্স স্কিমের ব্যবস্থা করা; ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করা; পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিতকরণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে ও ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সব পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে এবং ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পথ দুর্ঘটনা বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য তিনজন সংবাদযোদ্ধাকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়।