মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য বাজেট কেমন হওয়া উচিত

বৃহস্পতিবার, মে ৩০, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ডাক্তার মো. শারফুদ্দিন আহমেদ: আমরা জানি, স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না করলে স্বাস্থ্য সেবার বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত করে চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহায়কদের গুণগত মান উন্নয়ন করে স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব।

‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ জাতিসংঘে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে যথাসাধ্য অবদান রেখেছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবার শক্ত ভিত গড়ে তুলতে পারলেই এ খাতে পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশে গেল দুই দশকে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট জিডিপির এক শতাংশেরও কম। যা মালদ্বীপে নয় দশমিক ১৪ শতাংশ, ভারতে এক দশমিক এক শতাংশ, কিন্তু বাংলাদেশে শুন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে সরকার জিডিপি দুই শতাংশ বরাদ্দ রাখলে ভাল হয়। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে, মোট জিডিপির পাঁচ শতাংশে উন্নিত করা। অবশ্যই পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য। সরকারের কাছে এ ‘স্বাস্থ্য’ যদি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হয়, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে অবশ্যই বাজেট বৃদ্ধি করা উচিত বলে আমি মনে করি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৪০০ বিলিয়ন টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হলেও তা অপ্রতূল। কারণ, মূল বাজেট আট লাখ কোটি টাকা – এর দশ শতাংশের থেকেও ৪০০ বিলিয়ন টাকা বহু কম। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) বাজেটে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নে দশ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এ অবস্থায় গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২৯ হাজার কোটি টাকা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ছিল এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা।

দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইকুইপমেন্ট দেখাশোনার জন্য বায়ো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ। চিকিৎসা সেবা, মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আলাদা অতিরিক্ত বাজেট দেয়া প্রয়োজন। ব্যাসিক সাবজেক্টে শিক্ষক-স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে, অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণা জাতিসংঘের প্রশংসা অর্জন করেছে। ৭০টি দেশে এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ৩০টি ওষুধ কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে দেয়া হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের এ স্বাস্থ্য সেবাকে আরো সহায়তা করতে হবে। এছাড়া, উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে। হেলথ কার্ড এবং স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে আরো উন্নত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, অটোমেশনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা প্রয়োজন।

বাজেট বাড়ানো ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা করে এবং বাজেট সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাভাবে ইমার্জেন্সি সেবা দেয়া না গেলেও স্বায়ত্তশাসন দেয়া প্রয়োজন। সীমিত বাজেট থাকা সত্ত্বেও, অপচয় ও দুর্নীতি রোধ করে দক্ষতা বাড়িয়ে বাজেটের অর্থ সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব- এ ব্যাপারে সামগ্রিক কৌশলগত দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন।

আরো বেশি শক্তিশালী ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে সুদৃঢ়করণ করে বাংলাদেশেই যেন সব রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সহজে যেন কেউ বিদেশে চিকিৎসা করার ব্যাপারে আগ্রহী না হয়, এ বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য কেউ যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হয় তার জন্য বিশেষ স্কিম চালু করা প্রয়োজন। এ বাজেটেই এ সম্পর্কে নয়া নির্দেশনা আসলে ভাল হয়।

বার বার পাঁচ বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশ বিজয়, কর্ণফুলী টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের ফলাফল পুরো জাতির কাছে দৃশ্যমান। তবে, মানুষের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে স্বাস্থ্য খাতে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নিতকরণ। মাতৃমৃত্যু – শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার স্বাস্থ্য খাতে অর্জন করা গেছে, যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম সফলতা। কমিনিটি ক্লিনিক ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে সমাদৃত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি মেডিকেল স্থাপন করা হয়েছে, যাতে করে দেশের সব রোগী দেশেই চিকিৎসা নিতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে লিভার, কিডনি, হৃদরোগ, ক্যান্সার, চক্ষু ও অন্যান্য সব চিকিৎসা কম খরচে দেয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে ভিশন সেন্টার চক্ষু চিকিৎসায় অবদান রাখছে। কম খরচে মৌলিক চাহিদা পূরণ ও অসংক্রমুখ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। পুষ্টি উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসূচকগুলোর ব্যাপক অগ্রগতি করা গেলে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের পূর্বশর্ত স্মার্ট স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে, হাসপাতালে কনসাল্টেন্ট নিয়োগ, উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত কনসাল্টেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নত করা প্রয়োজন।

সুস্থ জাতি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার মূল চালিকাশক্তি। আগামী ২০২৪-২৫ বাজেটে মূল বাজেটের দশ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। যা চিকিৎসা সেবায়, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ও গবেষণা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়া সম্ভব হবে। দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির বিকল্প নাই।

লেখক: সদ্য সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন।