ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গীতের ইতিহাস যত দিন থাকবে, তত দিনই শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হবে জীবন্ত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের নাম। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে যাত্রা শুরু হয় গান শেখানোর অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’। এখনো মাসে চার বার এ অনুষ্ঠান বিটিভিতে প্রচার হয়। শরীর কিছুটা খারাপ হলেও, এখনো তিনি এ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ে অংশ নিয়ে থাকেন বেশ আগ্রহ নিয়েই।
দেখতে দেখতে জীবন চলার পথে ফেরদৌসী রহমান বুধবার (২৮ জুন) ৮২ বছরে পা রাখছেন। ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘দেখতে দেখতে জীবনের এতটা বছর পেরিয়ে ৮২ বছরে পা রাখছি। এখন আসলে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে, জরুরি কাজ না থাকলে ঘরের বাইরে বের হই না। ঘরে বসে যাদের গান ভাল লাগে মাঝে মাঝে তাদের গান শুনি। যেমন শাহনাজ রহমতুল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, কনকচাঁপা, শাকিলা জাফর, আলম আরা মিনু- এদের সবার কণ্ঠে আমার গান শুনতে ভালো লাগে।’
গান নিয়ে তিনি বলেন, ‘গান আসলে সাধনার বিষয়। এর বিকল্প বা শর্টকাট কোন রাস্তা নেই। যে কারণে আমি কিন্তু এখনো বিটিভির এসো গান শিখি অনুষ্ঠানটা করি। যাতে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমি গানে আমার জ্ঞানটুকু দিয়ে যেতে পারি। যাই হোক আমি সবার দোয়া প্রার্থী।’
একজন ফেরদৌসী রহমান বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের পথিকৃৎ। একাধারে একজন পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ও প্লেব্যাক সিঙ্গার। সংগীতজীবনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা সেই যে ছোট্টবেলায় শুরু হয়েছিল, তা এখনো বহমান। জীবন চলার পথে গানে গানে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা, সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন আমাদের দেশের সংগীতাঙ্গনের এ গর্বিত ব্যক্তিত্ব।
ফেরদৌসী রহমানের জন্ম কোচবিহারে, ১৯৪১ সালের ২৮ জুন। তিনি বাংলাবাজার স্কুল থেকে এসএসসি, ইডেন কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং পরবর্তী ইউনেস্কো ফেলোশিপ নিয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে স্টাফ নোটেসন কোর্স সম্পন্ন করেন। সবার প্রিয় ফেরদৌসী রহমান জীবনের প্রথম রেডিওর ‘খেলাঘর’ অনুষ্ঠানে গান করেন ১৯৪৮ সালে। ‘আসিয়া’ চলচ্চিত্রে তারই বাবা পল্লীসম্রাট আব্বাসউদ্দিনের সুরে আব্দুল করিমের লেখা ‘ও মোর কালারে’ গানটি গান। অবশ্য তার আগেই ‘এদেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্র মুক্তির মধ্য দিয়ে একজন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে তার অভিষেক হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশেনর ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খালামণি হিসেবেও দারুণ জনপ্রিয় তিনি।
ফেরদৌসী রহমান হারুনর রশীদ পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তবে, প্রয়াত রবিন ঘোষের সাথে যৌথভাবে তিনি ‘রাজধানীর বুকে’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার কাজ করেন প্রথম। প্রায় ২৬০টি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন তিনি। তিনটি লং প্লে, ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড, প্রায় বিশটি ক্যাসেটসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি গান তার রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের সাথে ফেরদৌসী রহমানের বিয়ে হয়।