শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

সড়ক নিরাপত্তা বর্তমান সময়ে একটি গভীর চিন্তার বিষয়

রবিবার, জুলাই ১৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু ও দীর্ঘ মেয়াদী পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেইফটি ২০১৮’ এর তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড ক্রাশ) প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়াও, ২০-৫০ লাখ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২৪ হাজার ৯৫৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার সমস্যা মোকাবেলার জন্য ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের অর্থায়নে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) নামের প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্পটি ঢাকাসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের ২৮টি শহরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিআইজিআরএস প্রকল্পের অংশ হিসেবে জন্স হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ-আইআইআরইউ) সিআইপিআরবির সাথে পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি করছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) সড়ক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকির কারণগুলোর মূল্যায়নের জন্য ২০২১ এর আগস্টে থেকে মোট তিন রাউন্ড তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ তথ্যগুলোর ফলাফলের ভিত্তিত ও মূল সুপারিশগুলো তুলে ধরে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

রোববার (১৬ জুলাই) ডিএনসিসির সম্মেলন কক্ষে স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২২ উন্মোচন করা হয়। ডিএসসিসি, জেএইচ-আইআইআরইউ, সিআইপিআরবি এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সেলিম রেজা। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের বিআইজিআরএস অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধি, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি অংশ নিয়ে ভবিষ্যতে এ প্রতিবেদনের ফলাফল কিভাবে ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেন।

সিআইপিআরবির পরিচালক সেলিম মাহমুদ চৌধুরী প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরেন। জন্স হপকিনস ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের (জেএইচ-আইআইআরইউ) পক্ষে ডাক্তার শিরিন ওয়াধানিয়া প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে রিপোর্টকৃত ৮৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারীরা (পথচারী, মোটরসাইকেল চালক ও সাইকেল চালক) দায়ী। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে দশ শতাংশ গাড়ির অতিরিক্ত গতি লক্ষ্য করা যায়। গতি সীমা অতিক্রম করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ট্রাকগুলোর (৮০ শতাংশ) মধ্যে। ভোরে (সকাল সাড়ে চারটা থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে) পর্যবেক্ষণ করা যানবাহনগুলোর ৪৯ শতাংশ গতি সীমা অতিক্রম করে যাতায়াত করছিল। মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল সন্তোষজনক (৯২ শতাংশ)। কিন্তু, আরোহীদের মধ্যে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ ও শিশুদের মধ্যে তা ছিল আরো কম (৩১ শতাংশ)। যানবাহন চালকদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৫৭ শতাংশ ও যাত্রীদের মধ্যে এ হার ছিল খুবই কম (পাঁচ শতাংশ)। যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশুদের মধ্যে কাউকেই চাইল্ড-সিট বা চাইল্ড-রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

প্যানেল আলোচক ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সড়ক প্রকৌশল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারা দেশে নতুন রাস্তার নকশা বা বিদ্যমান রাস্তাগুলো উন্নত করার সময় প্রকৌশল নীতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।’

বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেইফটি) শেখ মাহবুব ই রব্বানী বলেন, ‘সব ধরনের রাস্তার জন্য গতিসীমা নির্ধারণে ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ কাজ করে যাচ্ছে।’

ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) সিনিয়র রোড সেইফটি স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ মামুনুর রহমান উল্লেখ করেন যে, ডিটিসিএ পথচারী বান্ধব রাস্তা পারাপারের উপাদানগুলোর প্রকৌশল নকশা ডিএনসিসির সাথে শেয়ার করেছেন। এছাড়াও, তাদের (ডিটিসিএ) নিজস্ব ওয়েবসাইটে পথচারী বান্ধব রাস্তা পারাপারের উপাদানগুলোর প্রকৌশল নকশা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম) ডাক্তার নুসায়ের চৌধুরী উল্লেখ করেন যে, রোড সেইফটির অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জন্য একটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড কস্টেড অ্যাকশন প্লান তৈরি করা, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারী ব্যক্তিদের সার্বিক চিত্র জানার জন্য গবেষণা চালানো ও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরী ফার্স্ট-এইড সেবা দেয়ার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশের পরিচালক (ডিপার্টমেন্ট অফ ইপিডেমিওলজি) ডাক্তার সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা একটি মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকি; যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিতি প্রচেষ্টায় ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটি সহনীয় মাত্রায় রাখা সম্ভব।

মো. সেলিম রেজা তার বক্তব্যে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির গৃহীত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ডিএনসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল, মেকানিক্যাল সার্কেল ও সিভিল সার্কেল নামে তিনটি সার্কেল গঠন করে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।’

তিনি উল্লেখ করেন যে, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশ বিশেষ করে ডিএনসিসি অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন, তাতে অবদান রাখতে ভবিষ্যতে সড়ক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডির ফলাফল কাজে লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, ‘সড়ক নিরাপত্তা বর্তমান সময়ে একটি গভীর চিন্তার বিষয়। তবে, এ সমস্যা সমাধানে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে; যা অত্যন্ত ইতিবাচক।’