ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিনিধি টেরি এল ইসলে বলেছেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছিলাম। তবে, সেটা বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত নয়। এটা করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কোন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক নেই। সংবিধান পরিবর্তনের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন, যেটা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়।’
রোববার (৩০ জুলাই) সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে বৈঠক শেষে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের এ সদস্য এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকারের অধীনেই বর্তমান ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি টেরি ইসলে।
তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না। তবে, আন্তর্জাতিত পর্যবেক্ষক টিমের সদস্য হিসেবে আমরা আশাবাদী। আমরাও মনে করি, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। এ নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সমর্থ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বরাত দিয়ে টেরি বলেন, ‘ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তারা বাংলাদেশে যে কোন মূল্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান। সে জন্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবে।’
এ সময় কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি নিক পউলও। সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাথে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি। আমরা আশাবাদী, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে বাংলাদশে একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সচেষ্ট হবে। যেহেতু দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তাই কমিশন ও প্রশাসন একটি সুষ্ঠু সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবে বলে আমরা আশাবাদী।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্ততি ও সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে জানিয়ে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, ‘আমরা কমিশনের সাথে খুব সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা করেছি। আগামী নির্বাচনের প্রস্ততি ও সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচন সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে ইসির বিধিমালা জানতে চেয়েছেন। ইসি আশ্বস্ত করেছে, পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে ও পরেও আসতে পারবেন। কমিশন থেকে কোন বাধা নেই।’
আবেদ আলী আরা বলেন, ‘প্রতিনিধিরা ঢাকা-১৭ আসনে আশরাফুল আলমের ওপরে হামলায় ইসি কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যারা হামলা করেছে, তাদের গ্রেফতার ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিদেশি প্রতিনিধি দলের কোন আগ্রহ নাই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, সেই বিষয়ে বিদেশি প্রতিনিধি দলের কোন আগ্রহ নাই। উনারা বলেছেন, সংবিধানে যেটা আছে, সেটার আলোকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। কমিশনের যেই আইন আছে, সেটার যেন সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেন ইসিকে সাপোর্ট দেয়- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে এ কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এটা উনারা আশা প্রকাশ করেছেন।’
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কি না, আসতে হলে তাদের কি করণীয় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত আলোচনা হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কীভাবে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আয়োজন করবে, কীভাবে কাজ করবে সেটা জানতে চেয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি নির্বাচনে প্রার্থীদের উপর যে আক্রমণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন কি ব্যবস্থা নিয়েছে- এ বিষয়গুলো তারা জানতে চেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যদি আসতে চায়, তাহলে স্বাগত জানানো হবে। তবে, অবশ্যই তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে হবে।’
বৈঠকে আরো অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, চার নির্বাচন কমিশনার, আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে জাপানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী ইউসুকি সুগু, চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী এনডি লিন, ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের পক্ষে মাহফুজুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, সার্ক মানবাধিকার ফোরামের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার।