লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কুমারভোগে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ড্রেজারের জমানো পানিতে ডুবে চাঁদনী (১০) ও মরিয়মের (১১) মৃত্যু হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গোসল করতে গিয়ে তারা তলিয়ে যায়। চাঁদনী আক্তার কুমারভোগ গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে ও মরিয়ম একই গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের মেয়ে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মৌছা আমেনা হাকিম দাখিল মাদ্রাসায় যান নিহত দুই বান্ধবী। পুরো দিন ক্লাস শেষ করে বিকাল পাঁচটার দিকে মাদ্রাসা থেকে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে ছয়টার দিকে বাড়ির পাশে ড্রেজারে জমে থাকা পানিতে গোসল করতে যায়। গোসল করতে গিয়ে বাসায় না ফিরে আসায় পরিবারের সদস্যরা ডাক দিতে যায়। পরে, চাঁদনী নামের শিশুর লাশটি পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। এরপর পুকুরে অনেক খোঁজা খোঁজি করে মরিয়মের মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মরিয়মের মা সুমি বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘বিকাল পাঁচটার দিকে মাদ্রাসা থেকে আসার পরে মেয়েকে ভাত দিলাম। ভাত খেয়ে বলল, মা আমি গোসল করতে যাই। আমি ভাবলাম গোসলখানায় গোসল করবে। আমার ছোট ছেলেকে মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দিতে গেলাম। এসে দেখি মরিয়ম নাই। এর প্রায় আধঘন্টা পরে খোঁজতে খোঁজতে গিয়ে দেখি, জমে থাকা পানিতে চাঁদনীর মরদেহটি ভেসে আছে। এর আগে চাঁদনী আমাদের বাসায় আসছিল, তাই ধারণা করলাম আমার মেয়েও গোসল করতে আসছে। এরপর অনেক খোঁজাখোঁজি করে পানির নিচ থেকে আমার মেয়ের মরদেহ পাওয়া যায়।
নিহত চাঁদনীর ভাই সামিউল আলম কন্দনরত অবস্থায় বলেন, ‘সকালে আমি মাদ্রাসায় যাব না। তাই, বললাম বোন তোরও মাদ্রাসায় যেতে হবে না। ও (চাঁদনী) বলল, না আজকে মাদ্রাসায় প্রতিযোগিতা আছে। তাই, মাদ্রাসায় গেল। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে কোথায় গেল দেখলামও না। এরপর হঠাৎ শুনি, পুকুর পাড়ে বোনের লাশ।’
নিহত মরিয়মের মামা শাহীন শেখ বলেন, ‘আজকে হঠাৎ করে পুকুরে গোসল করতে গিয়েছে। ও কখনো একা পুকুরে গোসল করতে যায় না। যদিও সাঁতার জানে। সাঁতার জানার পরেও কিভাবে কি হল বুঝলাম না।’
মৌছা আমেনা হাকিম দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী ও মরিয়ম। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। নর্ম-ভদ্র। আমরা শোকাহত। আল্লাহ ওদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক।’
স্থানীয়রা জানান, মাগরিবের আগে আগে ড্রেজারের পকেট কাটা ওই পুকুরে তাদের লাশ লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা, হচ্ছে ড্রেজার দিয়ে ফেলা চোরা বালুতে পা আটকে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়।
কুমারভোগ ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কামাল হোসেন জানান, তাদের মধ্যে একজন সাঁতার জানত। কি করে পানিতে ডুবে মারা গেল, বুঝতে পারছি না। সেখানে ড্রেজারের পানি জমানো ছিল। তাছাড়া বৃষ্টির কারণেও পানি জমে ছিল।
এ বিষয়ে ড্রেজারের মালিক জহির ফকির জানান, আমার ড্রেজারের পাইপ ওইখানে আছে। তবে, মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া, আমার কাছ থেকে স্থানীয় কামাল মেম্বার ড্রেজারটি চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছিল।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসাইন জানিয়েছেন, শিশু দুটির পরিবারের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় তাদের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে লাশ মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।