বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

দাবানলের সতর্কতা নিয়ে সমালোচনার পর মাউইর জরুরি ব্যবস্থাপকের পদত্যাগ

শুক্রবার, আগস্ট ১৮, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
হারমান আন্দায়া

মাউই, হাওয়াই, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যের লাহাইনা শহরের মধ্য দিয়ে এই সপ্তাহে একটি ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় শক্তিশালী সতর্কীকরণ সাইরেন না বাজানোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনুশোচনা না করায় মাউই দ্বীপের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) পদত্যাগ করেছেন। দ্রুত ধাবমান অগ্নিশিখা শহরের উপর নেমে আসার প্রাক্কালে দ্বীপটির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সক্রিয় না করার জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন হারমান আন্দায়া। দাবানলে জীবিতরা বলেছেন যে, ‘তাদের কাছে অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে কোন সতর্কতা ছিল না।’ খবর এএফপির।

যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের বাড়িতে কিংবা গাড়িতে আটকা পড়েছিলেন বলে মনে করা হয়। কারণ, তারা পালানোর জন্য শেষ মুহূর্তে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই দাবানলে অন্তত ১১১ জন মারা গেছে বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত সংখ্যা যথেষ্ট বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মাউই কাউন্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজ মেয়র রিচার্ড বিসেন মাউই ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির (এমইএমএ) প্রশাসক হারমান আন্দায়ার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।’

‘স্বাস্থ্যের কারণ উল্লেখ করে, আন্দায়া অবিলম্বে কার্যকর তার পদত্যাগ জমা দিয়েছেন।’

অগ্নিকান্ডের আগে, স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের সময় ও পরে সাইরেন সক্রিয় না করাসহ আন্দায়ার অনেকগুলো ভুল পদক্ষেপ বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষুব্ধ করেছে। তারা বলেছে, ‘সতর্কতা সাইরেন ও অন্যান্য সঠিক পদক্ষেপ নিলে আরো জীবন বাঁচানো যেত।’

আন্দায়া বুধবার (১৬ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সাইরেনগুলো প্রাথমিকভাবে সুনামির জন্য ব্যবহার করা হয়। সাইরেন বাজলে জনসাধারণকে উচ্চ স্থল খোঁজার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেই রাতে যদি আমরা সাইরেন বাজিয়ে দিতাম, আমরা ভয় পাচ্ছিলাম যে, মানুষ উঁচু স্থানে (পাহাড়ের মধ্যে) চলে যাবে, যেখানে দাবানল সক্রিয় রয়েছে।’

সাইরেন যদি তাদের ১২১-ডেসিবেল সতর্কবার্তা বাজিয়ে দেয়, তবে তা খেয়াল করত কিনা তাও তিনি ভেবেছিলেন। আমেরিকান একাডেমি অফ অডিওলজি বলেছে, ‘এই সাইরেন একটি জেট প্লেন উড্ডয়নের সমতুল্য।

তিনি বলেন, ‘অনেক লোক যারা বাড়ির ভিতরে ও এয়ার কন্ডিশনার চলছিল, হতে পারে তারা সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন না।’

‘তাছাড়া, সেই দিন খুব দমকা বাতাস ছিল, এটা খুব জোরে ছিল, তাই তারা সাইরেন শুনতে পেত না।’

সিস্টেমটি সক্রিয় না করার সিদ্ধান্তের জন্য তিনি অনুতপ্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি তা মনে করি না।’

বিপর্যয়ের পর থেকে সমালোচনা বেড়েছে, বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন যে, কোন সরকারী সতর্কতা জারি করা হয়নি।

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চ্যানেলগুলোকে সীমিত করে এর মাধ্যমে সাধারণত সতর্কতা জানানো হয়।

জীবিত ব্যক্তিরা গণ মাধ্যমকে বলেছে, ‘তারা আগুনের বিষয়ে জেনেছে, যখন আগুন তাদের ঘিরে ফেলেছে।’

বাসিন্দারাও অভিযোগ করেছেন, সরকার ট্র্যাজেডির পরে সাহায্য পাঠাতে ধীরগতি করেছে। অনেকে বলেছে, ‘তারা সিভিল গ্রুপের কাছ থেকে আরো সহায়তা পাচ্ছে।’

হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন গেল সপ্তাহে ট্র্যাজেডির মোকাবেলায় জন্য প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

হাওয়াইয়ের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান লোপেজ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বলেছেন, ‘তিনি তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন সংস্থা নিয়োগ করবেন।’

ক্যাডেভার কুকুর ও তাদের হ্যান্ডলাররা বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) আরো মৃতদেহের জন্য দুর্যোগ অঞ্চলে চিরুনি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এখনো পর্যন্ত লাহেনা থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েকটি লাশ শনাক্ত করা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার স্ত্রী জিলকে নিয়ে সোমবার (২১ আগস্ট) মাউই সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গেল সপ্তাহের আগুনের পরে জো বাইডেন ফেডারেল সরকারের জরুরি সহায়তা মোতায়েনের অনুমতি দিয়ে হাওয়াইতে একটি বড় বিপর্যয়ে ঘোষণা করেছিলেন।