চট্টগ্রাম: এই সরকার একটি একদলীয় সরকার উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘এই সরকার জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশের মানুষের নেই বাক স্বাধীনতা, নেই গণতন্ত্র। ফ্যাসিস্ট কায়দায় এই সরকার দেশ চালাচ্ছে। শনিবার (১৯ আগস্ট) বিএনপি কার্যালয় ঘেরাও করে কার্যালয়ের সামনে থেকে ২০-২৫ জন নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলাকে ভয় পায় না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। এই সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই, জনগণকে তারা ভয় পায়। একের পর এক বিএনপির নেতা-কর্মীর গ্রেফতার করে জেলে পাঠাচ্ছে। আজকে ডিমের দাম, তেলের দাম, মাছের দাম, মাংসের দাম সবকিছুই জনগণের নাগালের বাইরে। তারা জনগণের মৌলিক অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই, এই ব্যর্থ সরকার ক্ষমতায় থাকার আর দরকার নেই। দ্রুত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় হোন।’
রোববার (২০ আগস্ট) বিকালে সিটির কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবন সামনে নুর আহাম্মেদ সড়কে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্ণাঢ্য র্যালি পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে জীবন যাপন করছে। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী রাখার জায়গা নেই। সেই দিকে সরকারের কোন নজর নেই। কারণ, আওয়ামী লীগ মাফিয়া, লুটেরাদের সরকার, জনগণের না।’
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচএম রাশেদ খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুর সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর ও প্রধান বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন।
আবুল হাসেম বক্কর বলেন, ‘সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। যখনই নির্বাচন আসে, যখনই সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, ঠিক তখনই জঙ্গি নাটক শুরু হয়। বিএনপির চলমান এক দফা আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতেই ফের সেই জঙ্গি নাটক শুরু করেছে । সরকার জঙ্গি নাটক করে পশ্চিমা বিশ্বকে দেখাতে চায়, তারা না থাকলে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। নাটক করতে করতে সরকার এই জায়গায় এসেছে। কিন্তু, সারা বিশ্ব এখন শেখ হাসিনার নাটক ধরে ফেলেছে। এ জন্য সারা বিশ্ব একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাচ্ছে।’
ফখরুল ইসলাম রবিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতার সব অর্জনকে ধ্বংস করেছে। দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচারালয়ের উপর ভর করে মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়া হচ্ছে। এবার এসব করে কোন লাভ হবে না। তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, এই অবৈধ সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই চট্টগ্রাম থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। তাই, এই চট্টগ্রাম থেকে ফের আপনাদেরকে জেগে উঠতে হবে। আরেকটি সংগ্রামের জন্য রাজপথে জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ।’
এইচএম রাশেদ খান বলেন, ‘দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। দেশকে মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথেই থাকব। প্রয়োজনে জেলে যাব, রক্ত দেব, শাহাদাত বরণ করবো। এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করেই আমরা ঘরে ফিরব। দেশের মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র রক্ষা ও যে কোন দুর্যোগে জনগণকে স্বেচ্ছায় সেবা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রয়াত জিয়াউর রহমান স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেছিলেন। আমরা সেই আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি।’
বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে দেশের সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি করে লুটপাট করছে। মানুষ আর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আর গুম, খুন ও জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ জেগে উঠছে।’
সমাবেশ স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ হারুন পাটোয়ারী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান দিদার, খাইরুল আলম দিপু, মুজিবুর রহমান, সাইদুল ইসলাম, সেলিম রেজা, হারুন আল রশিদ, মামুনুর রহমান, মঈনুদ্দিন রাশেদ, এনআই চৌধুরী মাসুম, হারুনুর রশিদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মর্তুজা খান, যুগ্ম সম্পাদক জমির উদ্দিন নাহিদ, সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া, জসিম উদ্দিন রকি, এমআবু বক্কর রাজু, গোলাম সরোয়ার, আনোয়ার হোসেন এরশাদ বক্তৃতা করেন।
উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই, আবু নাঈম দুলাল, আকতার হোসেন, মনির শাহ, সাজ্জাদ হোসেন, দিদার হোসেন, আব্দুল মান্নান আলমগীর, দেলোয়ার হোসেন বাবু, শাহাদাত হোসেন সোহাগ, জাকির হোসেন, ইমরান চৌধুরী বাবলু, এমদাদুল হোসেন স্বপন, মোকলেছুর রহমান, আব্দুল মান্নান, মো. হাসান, তাজুল ইসলাম নয়ন, রাসেল খান, মফিজ উদ্দিন সুমন, মো. আলমগীর।