বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
ইয়েভজেনি প্রিগোজিন

কুঝেনকিনো, রাশিয়া: জুনে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টাকারি ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রধান বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার (আগস্ট) তাকে বহনকারী একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে সেটির সব আরোহীই নিহত হয়। রাশিয়ার কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছে।

ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতায় আসার পর তার কর্তৃত্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হয় ও তারপর থেকে ওয়াগনার এবং এর বির্তকিত প্রধানের ভাগ্য অনিশ্চয়তার মুখে।

রাশিয়ার জরুরী পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বুধবার (২৩ আগস্ট) মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গের মধ্যে চলাচলকারী একটি ব্যক্তিগত বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘোষণা দেয়।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাাথমিক তথ্য অনুসারে, বিমানে আরোহীদের মধ্যে তিনজন ক্রু সদস্যসহ দশজনের সবাই মারা গেছে। পরে, রুশ এভিয়েশন এজেন্সি জানায়, ওয়াগনার প্রধান বিমানে ছিলেন।

এয়ারলাইনের তথ্য অনুসারে, প্রিগোজিন ও ইয়েভজেনি এমব্রার-১৩৫ (ইবিএম-১৩৫বিজে) বিমানে আরোহন করছিলেন। রোসাভিয়েটসিয়া এয়ারলাইন রুশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় নিয়োজিত থাকা ও ওয়াগনারের অভিযানের পরিচালনায় নেপথ্যে থাকা দিমিত্রি উটকিনকেও তালিকাভুক্ত করেছে।

ওয়াগনারের সাথে সংযুক্ত টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলির পোস্ট করা ফুটেজে একটি মাঠে জ্বলতে থাকা বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। তবে, এএফপি আর কোন তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দিনের প্রথম ভাগে এএফপির ধারণকৃত চিত্রগুলিতে রাশিয়ার আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের টাভার অঞ্চলের কুজেনকিনো গ্রামের কাছে দুর্ঘটনাস্থলে পাহারা দিতে দেখা গেছে।

এএফপির সাংবাদিকরা জানান, সেন্ট পিটার্সবার্গের লোকেরা প্রাইভেট ভাড়াটে গোষ্ঠীর সদর দফতরের বাইরে একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ওয়াগনার খুলির লোগো সম্বলিত ফুল বিছিয়ে দেয়।

রোসাভিয়েতসিয়া বলেছে, ‘এটি এমএনটি-অ্যারো এর বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ কমিশন গঠন করেছে।’ গুরুতর অপরাধ তদন্তকারি রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, তারা দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি জরুরি পরিষেবার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘দুর্ঘটনাস্থলে এখনো পর্যন্ত আট জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিনডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘আমি আসলে কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে, আমি অবাক নই।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় এমন বেশি কিছু ঘটেনি, যার পেছনে পুতিন নেই। তবে, আমি ভাল করে জানি না, এসবের জবাব কি।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সহযোগী মাইখাইলো পোদোলিয়াক সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘বিমান দুর্ঘটনাটি ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে রাশিয়ার অভিজাতদের জন্যে পুতিনের কাছ থেকে পাওয়া একটি বার্তা।’

তিনি মন্তব্য করেন ‘সাবধান’ আনুগত্যের খেলাপ মৃত্যুর সমান।’

রাশিয়ায় স্বল্প স্থায়ী বিদ্রোহের পরে বেশ কিছু ওয়াগনার যোদ্ধাদের পালিয়ে যাওয়া বেলারুশের বিরোধী দলের নির্বাসিত নেতা স্বেতলানা তিখানভস্কায়া বলেন, ‘প্রিগোজিনকে তার দেশ স্মরণ করবে না।’

তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেন, ‘সে একজন খুনি ছিল। তাই, তাকে মানুষ সেভাবেই বিবেচনা করবে।’

প্রিগোজিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সময় স্পটলাইটে আসেন। তিনি বাখমুতসহ বেশ কয়েকটি ইউক্রেনীয় শহর দখলের নেতৃত্ব দেন ও রাশিয়ার প্রচলিত সামরিক নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রিগোজিন ওয়াগনারের বিজয় কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে কয়েক মাস-ব্যাপী ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে যান। গেল ২৩ ও ২৪ জুন উত্তেজনা একটি স্বল্প স্থায়ী বিদ্রোহে মোড় নিলে হাজার হাজার ভাড়াটে সেনা অস্ত্র তুলে নেয় ও দেশের সামরিক নেতাদের হটানোর লক্ষে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মস্কোর দিকে যাত্রা করে।
বিদ্রোহটি একটি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হয়। চুক্তির অধীনে প্রিগোজিন তার কিছু বিদ্রোহিকে নিয়ে প্রতিবেশী বেলারুশ চলে যাবে বলে মনে করা হয়। সেখানে তারা প্রাক্তন সোভিয়েত দেশ বেলারুশের বিশেষ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে।

তবে, প্রিগোজিনের ভাগ্য অস্পষ্ট ছিল। তিনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতা উপভোগ করছেন বলে মনে হয়। তিনি ক্রেমলিনে একটি সভায় অংশ নিয়ে সেখানে তিনি তার ভাড়াটে গোষ্ঠীর কমান্ড হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন।

তবুও, তিনি বেশিরভাগ লোকের নজরের বাইরে ছিলেন।

তার যোগাযোগের মাধ্যম টেলিগ্রাম চ্যানেলটি জুনের শেষ দিক থেকে নিষ্ক্রিয় ছিল। পরিবর্তে ওয়াগনার-লিঙ্কযুক্ত টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলি বিরল বার্তাগুলি প্রচার করে।

সোমবার (২১ আগস্ট) প্রচারিত এক ভিডিও ফুটেজে প্রিগোজিনকে তার ‘মুক্ত’ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া আফ্রিকায় দেখা যায়।

ভাড়াটে গোষ্ঠীটি মহাদেশে একটি শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখে মালি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।