ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার ও তারাবো পৌরসভায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, ডেঙ্গুর মত মশা-বাহিত রোগসহ সাধারণ রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের সহায়তায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আরবান হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রকল্প প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলির মধ্যে নেটওয়ার্ক স্থাপন করবে- যার আওতায় বিস্তৃত পরিসরে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবাও দেয়া হবে।
নগর এলাকায় পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২৫ লাখ শিশু পরিষেবা পাবে।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের শাখার কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায় সেক বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু, নগর এলাকায় দরিদ্রদের জন্য সীমিত সরকারি স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা রয়েছে। তাই, দরিদ্র মানুষ ও বস্তিবাসীরা প্রায়ই আরো ব্যয়বহুল বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়। জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত নগরায়নের সাথে সাথে নতুন নতুন স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ উদ্ভূত হচ্ছে- যার মধ্যে ডেঙ্গুসহ সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগও বেড়েছে।’
প্রকল্পটি নারীদের প্রসবপূর্ব পরিষেবাগুলিকে আরো ভাল করবে। এ প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ৫০ হাজারের বেশি দরিদ্র নারী গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারটি চেকআপের সুযোগ পাবে। এছাড়া, ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক উচ্চ রক্তচাপের স্ক্রিনিং ও ফলোআপ চিকিৎসার সুযোগ পাবে।
প্রকল্পটি সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও পরিবার-পরিকল্পনা ক্লিনিকে দরিদ্রদের সেবাপ্রাপ্তির ব্যয় হ্রাসেও সহায়ক হবে। এছাড়াও, এই প্রকল্প রোগবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়াজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়ার পাশাপাশি দূষণ রোধ করে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালাবে।
প্রকল্পটি শহর ও পৌরসভাগুলিতে সংক্রামন রোগের প্রাদুর্ভাগ ঠেকাতে কৌশল ও কর্মপদ্ধতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এই প্রকল্পের আওতায় মৌসুমভিত্তিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে কাজ করা হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ও এ প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘মশাবাহিত ও সংক্রামক রোগের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক মশাকে লক্ষ্য করে স্প্রে করা ও লক্ষ্যবিহীন লার্ভা নিয়ন্ত্রণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু মশার জীবনচক্র বলবায়ু পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত, তাই প্রকল্পটি মশা নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষাগারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি উদ্ভাবনী মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও অন্যান্য সম্প্রদায়-ভিত্তিক হস্তক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য সক্ষমতা তৈরি করবে।’
বিশ্ব ব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এই ২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রথম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক গেল ৫০ বছরে বাংলাদেশকে মোট চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে।