ঢাকা: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা এলাকা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। ফলে, ১১ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথে যাতায়াতে সময় লাগার কথা মাত্র দশ মিনিট। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছিলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর বিমানবন্দর সড়কে (শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণি) যে যানজটের ভোগান্তি ছিল, তা কিছুটা হলেও কমবে। এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর বসে থাকতে হবে না গাড়িতে। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবস রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটা থেকেই বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কুর্মিটোলা থেকে বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও হয়ে মগবাজার তীব্র পর্যন্ত যানজট লেগে আছে। একইভাবে বিমানবন্দরমুখী লেনেও যানবাহনের জটলা লেগে আছে। ফলে, অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। অথচ বিমানবন্দর সড়কের এই অংশের ওপর দিয়েই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
উত্তরার জসীমউদদীন রোডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটায় তিনি উত্তরা থেকে বাসে ওঠেন। নয়টা ১৫ মিনিটে তিনি মহাখালী রেলগেটে নামেন। আলাপকালে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মহাখালী ডিওএইচএসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। প্রতিদিন গণপরিবহনেই যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন এই পথে যাতায়াতে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় লাগে। আজ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চালুর পরও সড়কে তীব্র যানজট রয়েছে। এটা আমাদের হতাশ করেছে।’
বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা থেকে মহাখালী অংশে পুরো বছরই যানজট থাকে বলে জানান প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের চালক আলমগীর কবির। তিনি বলেন, ‘ভাবছিলাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এই সড়কে যানজট কমবে। কিন্তু, আজ তার কোন আলামত দেখতে পাইনি। আগের মতই যানজট ঠেলে যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও এই উড়ালপথ গণপরিবহনের যাত্রীদের তেমন সুবিধা দিতে পারবে না বলে মনে করেন মতিঝিলগামী যাত্রী কাউসার মজুমদার। বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি স্ট্যান্ডে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন তো নিচের রাস্তা দিয়েই চলবে। গণপরিবহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুযোগ নেই। আর উঠলেও গণপরিবহন সেখানে যাত্রী পাবে না। এমন অবস্থায় যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে, তারাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পাবেন।’
এ দিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলেও মহাখালী ও বনানী র্যাম্পের কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে, এই দুটি এলাকার মানুষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পাচ্ছে না। রোববারও (৩ সেপ্টেম্বর) এই দুটি র্যাম্প নির্মাণে কাজ চলতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি এই দুটি র্যাম্প চালুর বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত মোট ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। তবে, বনানী ও মহাখালীর দুটি র্যাম্প এখনই খুলবে না। এর মধ্যে মহাখালী র্যাম্পের নামার পথের কাজ শেষ হয়েছে। ওঠার পথের কাজ বাকি রয়েছে। একইভাবে বনানীতে ওঠার পথের কাজ শেষ হলেও নামার পথের কাজ শেষ হয়নি। এ দুটি র্যাম্প চালু হলে নিচের সড়কের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।’
তবে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, বাকি অংশের (তেজগাঁও-কুতুবখালী) জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছর পর্যন্ত। এ উড়ালপথের পুরোটা চালু হলে বদলে যাবে যানজটের নগরী ঢাকার দৃশ্যপট।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। এরপর কাওলা প্রান্ত থেকে টোল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার সাথে ছোট বোন শেখ রেহানা ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন।