সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম: দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বা ভূমিকা অবশ্যই থাকতে হবে। তা না হলে কোনভাবেই কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে না। ঐতিহ্যবাহী সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধামের অধীনস্থ বিভিন্ন মন্দির ও মন্দিরের বিশাল সম্পত্তিগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা করার নিমিত্তে গঠিত স্রাইন কমিটির স্কীমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেই চরমভাবেই অবজ্ঞা করা হয়েছে। পাশাপাশি, সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ শিব চতুর্দশী রাত্রিতে দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ তীর্থ যাত্রীর স্বাস্থ্য, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, আবাসন, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিতে সীতাকুণ্ড মেলা কমিটি ঐতিহাসিকভাবেই অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু, স্রাইন কমিটির বর্তমান স্কীমে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসাবে কারো মতামত ও পরামর্শ না নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির ভূমিকাকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে গৌণ করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির বিশাল পরিমাণ সম্পত্তির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, বেদখলকৃত সম্পত্তির উপর দ্রুত আইনী নিষেধাজ্ঞা প্রদান, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যতার সাথে নিয়মিত পূজা অর্চনা সম্পাদন ও যথাশিগগির সম্ভব সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটিতে স্থানীয় কমপক্ষে পাঁচ জন সদস্য অন্তর্ভূক্তির দাবিতে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন মঠ-মন্দির পরিচালনা, উৎসব উদযাপন ও অন্যান্য সনাতনী অধিকার ভিত্তিক সংগঠনের পরিচালনা পরিষদ ও স্থানীয় সনাতনী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সময়পোযোগী মত বিনিময় সভা সীতাকুণ্ডস্থ শ্রী শ্রী লোকনাথ সেবাশ্রমে অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি সীতাকুন্ডস্থ লোকনাথ সেবাশ্রম মন্দিরে আয়োজিত স্মরণকালের বড় মত বিনিময় সভার আয়োজন করে সীতাকুণ্ড মেলা কমিটি। প্রায় ৩০টি মঠ মন্দির, অধিকার ভিত্তিক সংগঠন ও সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। বাবু দুলাল চন্দ্র দের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্যানেল মেয়র বাবু হারাধন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল কান্তি শর্মা।
সভায় ঐতিহ্যবাহী সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির গঠন প্রক্রিয়া, স্রাইন কমিটিতে স্থানীয়দের চরমভাবে অবজ্ঞা করা, সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির স্বাতন্ত্রতা খর্ব করার অপপ্রয়াস, স্রাইন ষ্ট্রেটের সম্পত্তির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, বেদখলকৃত সম্পত্তি পুণরুদ্ধার, চন্দ্রনাথ ধামের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন, পরিকল্পনা অনুযায়ী বার্ষিক ভিত্তিতে জনসাধারণকে জানানো ও আর্থিক হিসাব উপস্থাপন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি, স্রাইন কমিটিতে দুই মেয়াদের বেশী না থাকা ও ভবিষ্যতে সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটিকে দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনয়নে আয়োজিত মত বিনিময় সভায় বেশকিছু মতামত ও পরামর্শ সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটির প্রশাসক এবং চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ বরাবরে স্মারক লিপি আকারে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু করার পর সভায় সার্বিক বিষয়ে লিখিত বক্তব্য পড়েন মেলা কমিটির সাবেক সম্পাদক পলাশ চৌধুরী।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটিতে স্থানীয় জনগোষ্টীর পক্ষ থেকে সার্বজনীন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমপক্ষে পাচ সদস্য বৃদ্ধি করাসহ সার্বিক দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা আনয়নে সীতাকুণ্ড স্রাইন স্টেট রক্ষা কমিটিকে পুনরায় সক্রিয় করা হয়।
কমিটিতে হারাধন চৌধুরী বাবু আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক বিমল চন্দ্র নাথ, বাবুল কান্তি শর্মা, পলাশ চৌধুরী সদস্য সচিব এবং সমীর শর্মা, বিজয় ভট্টাচার্য্য, দুলাল চন্দ্র দে, স্বপন কুমার নাথ, অমর শীল, অলক ভট্টাচার্য্য, নিতাই দে রিপন, পিন্টু ভট্টাচার্য্য, সুজিত পালকে সদস্য করে ১৩ জনবিশিষ্ট কমিটি পুন:গঠিত হয়।