আবদুচ ছালাম: আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর দরবারে সম্মানের আসনে আসীন। তিনি যেন মহাবিশ্বের এক মহা বিষ্ময়। পশ্চিমা শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথে বাঙালি জাতিকে পরিচালিত করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় ধরে জাপানে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও তৎকালীন মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের উক্তির সূত্র ধরে নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ প্রভাবশালী মার্কিন গণ মাধ্যমগুলো বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বা বাস্কেট কেস হিসেবে বিদ্রুপ করে। দীর্ঘ সময় পর সেই মার্কিনের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলতে বাধ্য হয়েছে, বাংলাদেশকে আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যাবে না।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ জোট সরকার গঠনের মাত্র দেড় বছর পেরোনোর পরপরই ২০১০সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এ দৈনিকটি শিরোনাম করে ‘বাংলাদেশ, “বাস্কেট কেস” নো মোর’। বলাবাহুল্য, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের তালিকায় আর স্বল্পোন্নত দেশ থাকবে না। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ হয়েছিল নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। আর এ উত্তরণ সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার দুরদর্শী ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে।
বিগত সরকারগুলোর দীর্ঘ শাসনামল ধরে জাতিসংঘের তালিকায় যে দেশটি নিম্ন আয়ের একটি দেশ হিসেবে নিচে পড়ে ছিল, যার ম্যাজিকেল নেতৃত্বে স্বল্প সময়ে দেশটির এমন উত্থান, তিনি অবশ্যই সাধারণ কেউ নন। তিনি শেখ হাসিনা, সৃষ্টিকর্তা যাকে প্রকৃতির অপার অসীম বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরি করেছেন। তিনি যেন বাংলার প্রকৃতির অপরূপ রূপ। তার মাঝে আমরা বাংলার ধূলিকণা, শিশিরের স্নিগ্ধতা, সবুজ শ্যামলিমার শীতলতা, নদীর উচ্ছলতা, সূর্যের প্রখরতা, পাহাড়ের দৃঢ়তা, চন্দ্রিমার স্নিগ্ধতা, সমুদ্রের গর্জন, ঝড়ের রুদ্রতা, আকাশের বিশালতা সবকিছুই খুঁজে পাই। তিনি বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত। তার গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য দুইচার লাইনে তুলে ধরা মুশকিল। তার গুণাবলীর গভীরতা পরিমাপ করার মত জ্ঞান ও যোগ্যতা আমার নেই। আমি শুধু বলতে পারি, তিনি আমাদের জন্য আল্লাহর পরম দান। তাকে দিয়েই বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধি এনে দিতেই বুঝি সৃষ্টিকর্তা তাকে বার বার নিশ্চিত মৃত্যুর খুব কাছে থেকে বাঁচিয়ে ফিরিয়েছেন। আঁততায়ীর বুলেট, বোমা, গ্রেনেড হামলাসহ ২১ বার তার প্রাণ হরণের জন্য অপচেষ্টা চারিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আমি মনে করি, পুরো জগতের প্রতিপালক সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়া ও দেশের মানুষের দোয়া ও ভালবাসা তার সাথে আছে বলেই তাকে আমরা ফিরে পেয়েছি।
তিনি শত বাধা ও আঘাত বুকে নিয়ে খুনি স্বৈরাচারের দুঃশাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে, দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে অবিচল থেকেছেন। তিনি দেশের মানুষের সুখে হাসেন, মানুষের দুঃখে কাঁদেন ও পরম মমতায় আঘাত ঘুচিয়ে দেন। তিনি জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে রুদ্র রোষে গর্জে উঠেন। তিনি বিশ্ব দরবারে দেশকে তুলে ধরেছেন মর্যাদার আসনে। দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নতির চরম শিখরে।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়ায় তার জন্ম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আল্লাহর নিকট লাখোকোটি শুকরিয়া জানাই, আমরা শেখ হাসিনার মত একজন মহিয়সীকে পেয়েছি। প্রকৃতির মাঝে তাঁর বেড়ে ওঠা। তিনি প্রকৃতি ভালবাসেন। তাই প্রকৃতিকে বুঝেন ও প্রকৃতির মাঝে মিশে যেতে পারেন। যে কোন পরিস্থিতিকে সামলে নেয়ার সহজাত ক্ষমতা বুঝি প্রকৃতি থেকেই তিনি পেয়েছেন। তাছাড়া তার পিতা-মাতাও ছিলেন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যেও ছিল প্রকৃতি থেকে পাওয়া অনন্য সাধারণ গুণাবলী। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামের ধূলোবালি গায়ে মেখে, গ্রাম বাংলার মানুষকে ভালবেসে বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন। যে ভালবাসার তাড়না তাকে বাংলা ও বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে, বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবনটাকে উৎসর্গীত করতে প্রভাব রেখেছে। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন বাংলার আছে অফুরান সম্পদ, আছে অসম শক্তি। বাঙালির কষ্ট সহিষ্ণুতা, সুপ্ত আবেগ, সাহস জুগিয়ে ও অদম্য মানসিকতা শানিত করে তুলতে পারলে ও নিজেদের সম্পদ ব্যবহারে স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারলে দেশে সমৃদ্ধি আসবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে, মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, দেশ সোনার বাংলায় পরিনত হবে। তিনি তার জীবন ও যৌবনের সমস্তটুকু দিয়ে তাই করেছিলেন। বাঙালিকে মুক্তির মোহনায় টেনে এনেছিলেন ও বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ যোদ্ধা জাতিতে পরিনত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। দুরদর্শী নেতৃত্ব আর হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের অধিকারী পিতা বঙ্গবন্ধুর গুণাবলী, আদর্শ কন্যা শেখ হাসিনা বুকে ধারণ করতে পেরেছেন। মাতা ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন ত্যাগের প্রতিমূর্তি। মাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ধৈর্য্যশীলতা, ন্যায়পরায়নতা, মমতাশীলতা, ত্যাগের শেখ হাসিনার মননে ভালভাবেই বাসা বেঁধেছে। পারিবারে রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠার কারণে স্কুল জীবন থেকেই শেখ হাসিনা তৎকালীন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি ও আন্দোলনমূখর পরিবেশ ছাত্রাবস্থাতেই তার মাঝে সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ ঘটায়। কলেজ জীবনে তিনি সরাসরি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন।
বাংলার স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রাম, ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ ও নেতৃত্বদানের মধ্য দিয়ে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বইপড়া, গানশোনা, আবৃত্তি ও সংস্কৃতিমনস্কতা শেখ হাসিনাকে একজন আধুনিকা রমনী করে তুলে। তার চলন, বলন, উপস্থিতি মানুষের মনে মুগ্ধতা ছড়াতে পেরেছে সহজেই। বিয়ের পিড়িতে বসে তিনি ঘরনী হতে পেরেছেন, হতে পেরেছেন স্নেহময়ী, মমতাময়ী মা। জন্মদিনের শুভক্ষণে এ নেত্রীকে জানাই শত কোটি সালাম ও অভিবাদন। আল্লাহর দরবারে অশেষ ফরিয়াদ জানাই, শেখ হাসিনাকে যেন তিনি দীর্ঘ নেক হায়াত দান করেন. আমীন। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ চির উন্নত ও চিরজীবী হোক।
লেখক: কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।