মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ইসরায়েলে বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

সোমবার, অক্টোবর ৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সাথে সংঘাতে বিপর্যস্ত ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে সমরাস্ত্র দেয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের কাছাকাছি বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে দেশটি। খবর বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরার।

সোমবার (৯ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কাছাকাছি একাধিক সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধ বিমান পাঠাবে। অস্টিন বলেন, ওয়াশিংটনের বিশ্বাস, হামাসের সর্বশেষ হামলাটি ইসরায়েল-সৌদি আরব সম্পর্ককে ব্যাহত করতে চালানো হয়েছে।’

একইসাথে দেয়া হবে সমরাস্ত্র। সোমবার (৯ অক্টোবর) থেকে এ নিরাপত্তা সহায়তা পাঠানো শুরু হবে। এই অঞ্চলে যুদ্ধবিমানও মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্র।

নৌবাহিনীর সর্বাধুনিক ও অত্যাধুনিক বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ডে রয়েছে পাঁচ হাজার নাবিক, ক্রুজার ও ডেস্ট্রয়ার। যা হামাসের কাছে পৌঁছানো থেকে শুরু করে নজরদারি চালানো পর্যন্ত যে কোন কিছুর উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

শনিবার (৭ অক্টোবর) হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ইসরায়েল কাছে যেতে শুরু হবে।

এ দিকে, রোববার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে, যেন দেশটি সর্বাত্মক যুদ্ধে যেতে পারবে।

মন্ত্রিসভা কমিটিতে গৃহীত ওই সিদ্ধান্তে হামাসের হামলার পর নেতানিয়াহু যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা কমিটি নেতানিয়াহুকে সামরিক অভিযান চালানোর যে অনুমোদন দিয়েছে, তা সোমবার (৯ অক্টোবর) দেশটির পার্লামেন্ট নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক কমিটিতে উঠতে হবে। এরপর নেতানিয়াহু এ সিদ্ধান্ত নেসেটের প্লেনারিতে উপস্থাপন করবেন।

সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে ইসরায়েল সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় সেনাসদস্য পেতে সংরক্ষিত সেনাদের (রিজার্ভিস্ট) ডাকতে পারবে।

ইসরায়েলে হামাসের হামলায় বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুইজন ইউক্রেনের নাগরিক, একজন ফরাসি নাগরিক ও দশজন নেপালি নাগরিক রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত তিনজন মার্কিনও রয়েছেন।

এর আগে রোববার (৮ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘হামাসের হামলার পরে নিখোঁজ ও মৃত মার্কিনদের রিপোর্ট যাচাই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিকভাবে কাজ করছে।’

অন্য দিকে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর সিদ্ধান্ত চলমান উত্তেজনার ‘ব্যাপক বৃদ্ধি’ ঘটাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একজন বিশ্লেষক। আল জাজিরার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারার মতে, এই অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তিকর ও উত্তেজনা ‘ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি’ করবে।

লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘হামাসের হামলার বিরুদ্ধে সমর্থন দেখানের অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সামরিক জাহাজ ও বিমান ইসরায়েলের কাছাকাছি পাঠাবে।’

মারওয়ান বিশারা বলছেন, ‘আমি কৌশলগত সামরিক পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে পারছি না কেন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী সেখানে পাঠাতে হবে? এতে প্রায় পাঁচ হাজার নাবিক ও পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে। ইসরায়েল নিজেই তো গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে সক্ষম।’

তার দাবি, ‘সংঘাতের এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে এভাবে সমরাস্ত্র মজুদ করার ধারণা খুবই বিপজ্জনক।’

বলে রাখা ভাল, মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন ও অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের উত্তর দিতে শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোর থেকে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের একটি অভিযান শুরু করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়েছে ইসরায়েল। এছাড়া, হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে বহু সেনাসদস্যও রয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরো প্রায় দুই হাজার ২০০ ইসরায়েলি।

অন্য দিকে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় মৃত ছাড়িয়েছে ৪০০।