কক্সবাজার: ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে লাইন উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশে রেলওয়ে যোগাযোগে নয়া যুগের সূচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১১ নভেম্বর) নতুন নির্মিত রেলওয়ে স্টেশনে একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে আইকনিক কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন ও রেল লাইন উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার রেলওয়ে যোগাযোগের সাথে যুক্ত হয়েছে। আজ গর্বিত হওয়ার দিন।’
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি সশরীরে উপস্থিত হতে পেরে সত্যিই খুব খুশি হয়েছেন বলে উল্লেখ করে তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি রেলপথ উদ্বোধন করে আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এটা এ অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। আজ সেই দাবি পূরণ হয়েছে।’
নতুন এই রেলওয়ে যোগাযোগ পর্যটন, শিল্পায়ন, ব্যবসায় ও বাণিজ্য বাড়ানোর সাথে সাথে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড় করানোর নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেণ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রম এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে স্থানীয় শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধনের মাধ্যমে, ব্রিটিশ আমলে প্রথম উদ্যোগ নেয়ার ১৩৩ বছর পর পৃথিবীর বৃহত্তম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার রেলওয়ে যোগাযোগের আওতায় এসেছে।
ট্রেন লাইন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার থেকে একটি ট্রেনে চড়ে রামু যান।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে একটি আন্তঃনগর ট্রেন আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চলাচল শুরু করবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এরইমধ্যে তার সময়সূচী ও ভাড়া নির্ধারণ করেছে। তবে, ট্রেনের নাম এখনো ঠিক করা হয়নি।
ট্রেনটির ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে প্রায় আট ঘন্টা দশ মিনিট সময় লাগবে। এটি ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামে দুটি স্টেশনে থামবে। ট্রেনটি ঢাকা থেকে রাত সাড়ে দশটায় ছেড়ে সকাল ছয়টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে দুপুর একটায় ছেড়ে রাত নয়টা দশ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নন-এসি শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকালে প্রস্তাবিত টার্মিনাল থেকে সমুদ্র পর্যন্ত প্রসারিত মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ১৪ দশমিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম নেভিগেশন চ্যানেলের উদ্বোধন এবং বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে। এর কার্যক্রম আগামী ২০২৬ সালে শুরু হওয়ার কথা।
শেখ হানিনা মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে এক হাজার ২০০-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট (৬০০ মেগাওয়াট) ও সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উদ্বোধন করবেন। তিনি মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন । এর আগে প্রধানমন্ত্রী শনিবার (১১ নভেম্বর) সকাল দশটা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বলে রাখা ভাল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নানা স্লোগান লেখা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারে পুরো কক্সবাজার সাজিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে কক্সবাজারবাসী। কক্সবাজার শহরে একটি রেল স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরো সাতটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ে লাইনটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল দিয়ে পার করায় হাতি ও অন্যান্য বন্য প্রাণীদের চলাচলের সুবিধার্থে একটি ওভারপাসও নির্মাণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজীপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে দর্শনীয় আইকনিক কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন। ছয় তলা স্টেশন বিল্ডিংয়ের আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট যার তিনটি প্ল্যাটফর্ম দৈর্ঘ্যে ৬৫০ মিটার ও প্রস্থে ১২ মিটার। এগুলো ছাড়াও এর পাশে রেলওয়ে আবাসিক এলাকা নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেল, ক্যান্টিন, লকার ও গাড়ি পার্কিংও রয়েছে। এই স্টেশন দিয়ে দিনে প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে ও পর্যটকরা তাদের লাগেজ স্টেশন লকারে রেখে সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী এর আগে ২০১১ এর ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের রামু-ঘুমধুমের মধ্যে রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।