ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আগামী জানুয়ারির মধ্যে জাপানের নারিতা হয়ে কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে এয়ার কানাডার সহযোগিতায় কানাডার পশ্চিম উপকূলীয় প্রধান শহর ভ্যাঙ্কুভার ও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার আশা করছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম রোববার (১৯ নভেম্বর) বলেন, ‘আমরা এরমধ্যেই কোড শেয়ারিং চুক্তির ব্যাপারে এয়ার কানাডার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি ও আমরা জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে এটি কার্যকরের আশা করছি।’
কোড শেয়ারিং হল একটি বিপণন ব্যবস্থা; যেখানে একটি এয়ারলাইন্স অন্য এয়ারলাইন্স দ্বারা পরিচালিত একটি ফ্লাইটে তার মনোনীত কোড রাখে ও সেই ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি করে।
কোড শেয়ারিং চুক্তির পর একজন কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রী বিমানের বিমানে চড়ে নারিতা যাবেন ও সেখানে যাত্রাবিরতির পর তিনি এক টিকিটেই বোর্ডিং পাস ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দ্বারা জারি করা লাগেজ ট্যাগ নিয়ে এয়ার কানাডার বিমানে নারিতা থেকে ভ্যাঙ্কুভার বা লস অ্যাঙ্গেলসে পৌঁছাতে পারবেন।
বিমানের সিইও আশা করেছিলেন, কোড শেয়ারিং জাতীয় পতাকাবাহী ফ্লাইটে কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের সাথে তার নারিতা ফ্লাইটে প্রচুর ট্রাফিক পেতে সহায়তা করবে কারণ, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ভ্যাঙ্কুভার ও লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করছেন।
বিমানের ছয় ঘণ্টার নারিতা রুট ও প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নারিতা থেকে ভ্যাঙ্কুভার বা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছানোর জন্য নয় ঘন্টার ফ্লাইটসহ মোট ১৫ ঘন্টা সময় লাগবে ও এতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় বাঁচবে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলগামী যাত্রীরা সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ব্যবহার করে সিঙ্গাপুর বা কুয়ালালামপুরে লেওভার নিয়ে ভ্যাঙ্কুভার বা লস অ্যাঞ্জেলেসে পৌঁছানোর জন্য ফ্লাইটে মোট ২০ ঘন্টার বেশি সময় লাগে।
বাংলাদেশী বিশাল কানাডিয়ান প্রবাসীরা এরমধ্যেই বিমানের ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা ফ্লাইটকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে। কিন্তু, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থার কাছে এখনো কানাডিয়ান বা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ভ্রমণকারীদের জন্য অফার করার কোন বিকল্প নেই।
শফিউল আজম বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমরা আমাদের যাত্রীদের আরো রুট সংযোগ অফার করতে চাই, যেমন পুরো পৃথিবীল অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো তাদের বাজারে উপস্থিতি ও প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা প্রসারিত করার জন্য কোড-শেয়ার ব্যবস্থা তৈরি করে চলেছে।’
বিমান প্রধান আশা প্রকাশ করেন, ১৭ বছর পর গেল সেপ্টেম্বরে পুনরায় চালু হওয়া ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে আরো জনপ্রিয় হবে।
শফিউল আজম আরো বলেন, ‘আমরা এরমধ্যেই আমাদের ঢাকা-নারিতা রুটে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা রুটের লোড ফ্যাক্টর নিয়ে সন্তুষ্ট।’
বাংলাদেশি ও জাপানি যাত্রী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক নেপালি নাগরিক ও বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিকও বিমানের তিনটি সাপ্তাহিক ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইট ব্যবহার করছেন।
বিমানের ডিরেক্টর মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৫০ শতাংশ প্যাসেঞ্জার লোড ফ্যাক্টর দিয়ে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইট শুরু করেছি। তবে, বর্তমানে আমাদের উভয় প্রান্তেই প্রায় ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টর রয়েছে।’
এয়ার কানাডার সাথে কোড শেয়ার করার পর ঢাকা-নারিতা-ঢাকা ফ্লাইটের লোড ফ্যাক্টর প্রায় শতভাগ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মোহাম্মদ সালাউদ্দিন আরো বলেন, ‘বর্তমানে ভ্যাঙ্কুভার ও ক্যালিফোর্নিয়া রুটে চলাচলকারী ফ্লাইটের ভাড়ার চেয়ে বিমানের নারিতা রুটের ফ্লাইটে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলগামী যাত্রীদের জন্য ভাড়া কমতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান অন্যান্য এয়ারলাইন্স ইন্টারলিঙ্কিং বা কোড শেয়ারিংয়ের চেষ্টা করছে; যাতে পতাকাবাহী তার যাত্রীদেরকে ৩৬০ ডিগ্রি এয়ারলাইনের মত জাপানের বাইরে সিডনিসহ অন্যান্য রুট অফার করতে পারে।’
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে এয়ার সার্ভিস চুক্তির আওতায় টোকিও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে সে দেশে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে পঞ্চম স্বাধীনতা সুবিধা ভোগ করার অনুমতি দেয়।
পঞ্চম স্বাধীনতা একটি এয়ারলাইন্সকে তার নিজের দেশ থেকে দ্বিতীয় দেশে ও সেই দেশ থেকে তৃতীয় দেশে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার অধিকার দেয়।
বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএবি) দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) সাথে বাংলাদেশের মর্যাদা ‘ক্যাটাগরি-১’ এ উন্নীত করার জন্য চেষ্টা করছে; যাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ স্থানীয় বিমান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের নিজস্ব ফ্লাইট চালাতে পারে।