রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান

সোমবার, জানুয়ারী ২২, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকে পাল্টাপাল্টি হামলা ও গুপ্তহত্যার ঘটনা উভয়কে সামনাসামনি দাঁড় করিয়েছে। খবর দ্য ইকোনমিস্টের।

গেল ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া গাজা সংঘতের ১০০ দিন পেরিয়েছে। সংঘাতের শুরু থেকেই ইসরাইলকে জয়ী করতে প্রাণপণ সাহায্য করছন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইভাবে এই সংঘাতের মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতেও চেষ্টা করছেন তিনি।

তবে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় তার জন্য দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ইরানের ‘প্রতিরোধ গোষ্ঠী’ এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের ওপর আরো বিপজ্জনক হামলা পাল্টা হামলায় জড়িয়ে পড়েছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যার ঘটনাও চলছে।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ১৪০টির বেশি ড্রোন ও রকেট হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় হামলাটি চালানো হয় শনিবার (২০ জানুয়ারি)। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের মতে, পশ্চিম ইরাকের আইন আল আসাদ মার্কিন ঘাঁটিতে ‘বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট’ ছোড়া হয়।

তবে, প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে সেগুলোর অধিকাংশ ধ্বংস করা হয়। তারপরও কয়েকটি রকেট ঘাঁটিতে আঘাত হানে। এতে বেশ কয়েকজন মার্কিন ও ইরাকি সেনা আহত হন। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

এ হামলার পর সরসারি ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নিতে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছেনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর ফলে একটা উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। যদি কোন ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল মনে হবে। যদি পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচনের বছরে নতুন এক যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়বেন।

এ দিকে, ইয়েমেনে ইরানের আরেক মিত্র হুতি বিদ্রোহীদের বাবেল মানদেব প্রণালীতে বিদেশি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করতে তাদের ওপর এখন পর্যন্ত সাত দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি বলছে, ‘ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লড়াই করছে। তার অংশ হিসেবে লোহিত সাগর ও বাবেল মানদেব প্রণালীতে ইসরাইলি ও পশ্চিমা জাহাজের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’

কিন্তু তাদের টার্গেট করার ব্যাপারটি বিক্ষিপ্ত। যদি ইসরাইলি ও পশ্চিমা জাহাজ শনাক্ত করার রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সহযোগিতা নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় হুতিদের হামলা বন্ধ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজেও ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন। বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলা হুতিদের থামাতে পারবে না।’

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন ইয়েমেনে ‘কার্যকর সামরিক অভিযান’ চালানোর প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করছে। এ দিকে, লেবাননে ইরানের সবচেয়ে পুরানো ও সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বাহিনীর সাথে নিয়মিত গুলি ও রকেট বিনিময় করছে। তারাও হামাসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। কিন্তু, এখনো ইসরাইলের সাথে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করেনি।

গেল ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইল আগ বাড়িয়ে লেবাননে হামলা চালানোর হুমকি দিলেও, বাইডেন প্রশাসন সে বিষয়ে ইসরাইলকে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় হামলা বন্ধ না হলে হিজবুল্লাহর ওপর প্রতিশোধের পাশাপাশি বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইল।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান এভাবে বিপজ্জনক ও ভারসাম্যমূলক খেলা অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইলকে দুর্বল করার লক্ষ্যে হামলা চালাতে ‘প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো’কে সাহায্য করে চলেছে ইরান। এর মাধ্যমে একইসাথে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাড়াতে ও আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে, তাদেরকে বেইজ্জত করতে চাইছে ইরান। বিপরীতে সীমিত পরিসরে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উভয়ই সরাসরি সংঘাত থেকে বিরত থেকেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব নাও হতে পারে।