শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

দুই বছরের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা আইন বলবৎ মিয়ানমারে

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

মিয়ানমার: মিয়ানমারে সামরিক জান্তা দেশের সব যুবক-যুবতীর জন্য কমপক্ষে দুই বছরের জন্য বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার নির্দেশ জারি করেছে। দেশজুড়ে একাধিক ফ্রন্টে সরকারী সেনা ও প্রতিরোধ বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ চলার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া দেশটির ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়া বলেছে, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের অবশ্যই দুই বছর পর্যন্ত সামরিক বাহিনিতে কাজ করতে হবে। আর অনূর্ধ ৪৫ বছর বয়সী ডাক্তারদের মত বিশেষজ্ঞদের অবশ্যই তিন বছরের জন্য কাজ করতে হবে।’

টেলিভিশনে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘চলমান জরুরি অবস্থায় বাধ্যতামূলক জাতীয় নিয়োগ আইনের অধীনে পরিষেবাটি মোট পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।’

জান্তার মুখপাত্র জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিকে সুরক্ষা করা ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব কেবল সেনাদের নয়, বরং সব নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। তাই, আমি সকলকে ‘জনগণের সামরিক সেবা আইন’ গর্বিতভাবে অনুসরণ করতে আহ্বান জানাই।’

জান্তা গেল ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বলবৎ হওয়া পিপলস মিলিটারি সার্ভিস আইনের কার্যকারিতা বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

তৎকালীন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালে সামরিক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করে একটি আইন প্রবর্তন করে। কিন্তু, ১১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর করা হয়নি। আইনটিতে বলা হয়েছে, ‘যারা এ আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হবে, তাদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।’

বিবিসির প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে যে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জাতিগত মিলিশিয়া ও অভ্যুত্থানবিরোধী যোদ্ধাদের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে সরকারি সৈন্যরা পরাজিত হয়েছে।

সেনাবাহিনী ২০২১ সালে অভ্যুত্থানে একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে। এএফপি মন্তব্য করেছে, ‘জান্তা সরকার তিন বছর ধরে তার শাসনের ব্যাপক সশস্ত্র বিরোধিতা দমন করতে সংগ্রাম করছে ও সম্প্রতি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র বাহিনীর একটি জোটের কাছে বেশ কয়েক বড় পরাজয়ের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।’ রয়টার্স এ পর্যবেক্ষণের পরিপূরক হিসেবে বলেছে, ‘অক্টোবর থেকে তাতমাডও নামের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণতন্ত্রপন্থী যোদ্ধাদের সাথে জোটবদ্ধ তিনটি জাতিগত-সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বিত আক্রমণ মোকাবেলা করতে গিয়ে কর্মকর্তাদের প্রাণহানির সম্মুখীন হয়েছে।’

ওয়্যার সার্ভিস মন্তব্য করেছে, ‘মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ১৯৬২ সালে প্রথম ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এবার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্লেষকদের উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তাতমাডো নয়া সেনা নিয়োগের ক্ষেত্রে সংকটের মুখে পড়েছে ও অযোদ্ধা কর্মীদের সামনের সারিতে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে, গণতন্ত্রপন্থী ‘জনগণের প্রতিরক্ষা বাহিনী’ কয়েক হাজার তরুণ রিক্রুট তালিকাভুক্ত করেছে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে জান্তা বিরোধী যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে।’

গেল অক্টোবরের শেষের দিকে জাতিগত সংখ্যালঘু যোদ্ধাদের একটি জোট উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে আচমকা আক্রমণ শুরু করে। তারা কয়েকটি অঞ্চল দখল ও চীনে লাভজনক বাণিজ্য রুটের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বেশ কয়েকটি সামরিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেছে, ‘উত্তরের আক্রমণে সাফল্য ও পাল্টা আক্রমণে সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা নিম্ন ও মধ্য-স্তরের কর্মকর্তাদের মনোবল দুর্বল করেছে।’

স্থানীয় একটি মনিটরিং গ্রুপের মতে, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে সাড়ে চার হাজার জনেরও বেশি মানুসের মৃত্যু হয়েছে ও ২৬ হাজার জনের বেশি গ্রেফতার হয়েছে।