চট্টগ্রাম: প্রচণ্ড তাপদাহে দেড় হাজার লটের অধিক রাসায়নিক ও দাহ্য দ্রব্য নিয়ে অতি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কয়েক বছর ধরে পড়ে থাকা পরিবেশ দূষণকারী এসব দাহ্য দ্রব্য বিভিন্ন জটিলতায় নিলাম করা যায়নি। তাই, শেড থেকে দ্রুত বের করে নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে জরুরি পত্র দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)।
চট্টগ্রাম বন্দরের পি শেডে আমদানি করা অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যের পাশেই গেল তিন বছরের অধিক সময় ধরে পড়ে আছে প্রায় ১০০ ড্রাম রাসায়নিক। এসব টেক্সটাইল রাসায়নিক আমদানিকারক ছাড় না করায় নিলামে বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিকট বাই পেপার হস্তান্তর করে চবক।
কিন্তু, জটিলতার মুখে নিলামে বিক্রি না হওয়ায় এ ড্রামগুলো পড়ে আছে বছরের পর বছর ধরে। চট্টগ্রাম বন্দরের দুইটি কন্টেইনার ইয়ার্ড ও ১২টি শেডে দীর্ঘ দিন ধরে এক হাজার ৫৬৬টি লট রাসায়নি ও দাহ্য দ্রব্য পড়ে থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন বন্দরের কর্মকর্তারা। এসব রাসায়ীনক ও দাহ্য দ্রব্য বন্দরসহ আশপাশের এলাকার জন্য নিরাপত্তার পাশাপাশি অগ্নিঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চবকের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, ‘যে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থগুলো সেখানে রয়েছে, তা বন্দরের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, এগুলো দ্রুত নিলামে বিক্রি কিংবা প্রয়োজনসাপেক্ষে ব্যবহার করতে দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তা না হলে যে কোন দুর্ঘটনায় বিশ্ববাজারে এ আন্তর্জাতিক বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে ‘
এ দিকে, শেড ও ইয়ার্ডে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রুত নিলামে বিক্রি কিংবা ধ্বংস করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে জরুরি পত্র দিয়েছে চবক।
চবকের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘যেসব ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক সেখানে রয়েছে, সেগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয়া হয়েছে। এ বছর এমনিতেই তীব্র গরমের কারণে অগ্নিঝুঁকি আরো বেড়েছে।’
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্নিঝুঁকি এড়াতে আগেই প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ ফায়ার সার্ভিসের। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, ‘বন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করতে সেখানে পূর্বে ফায়ার সেফটি প্ল্যান করতে হবে। সেইসঙ্গে অগ্নিনির্বাপনের সামগ্রী ও ব্যবস্থা পূর্বে থেকেই নেয়া হলে, যে কোন দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
তবে, বিপজ্জনক এসব দ্রব্য নিয়ে কিছুটা বিপাকে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। অধিকাংশ দ্রব্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় যেমন নিলামে বিক্রি সম্ভব নয়; তেমনি বিপজ্জনক দ্রব্য হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেও ধ্বংস করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ কমিশনার মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘এ ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য পদার্থ ধ্বংস করার মত সক্ষমতা কাস্টমসের নেই। তাই, এনবিআরের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারি সার্ভিসেসকে (এমইএস) পত্র দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ পত্রটি এরইমধ্যে সেই দফতরে পাঠিয়েছে।’
তাই, খুব দ্রুতই এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশা করছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ও রফতানি দ্রব্য থেকে বছরে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। গেল চার বছরে দুই বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ২০২০ ও ২০২২ সালের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সেই প্রত্যাশায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।