লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী শিবিরে ভয়ানক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে ইসরায়েলপন্থীরা। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে এ দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংবাদ বিবিসির।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, মুখোশধারী পাল্টা বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনপন্থীদের লাঠি দিয়ে আক্রমণ এবং ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।
ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মেরি ওসাকো এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ সহিংসতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাতে ফিলিস্তিনপন্থী শিবিরে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ডাকা হয়েছে।’
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেখানে একটি সমাবেশকে বেআইনি ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ হামলার পর ফিলিস্তিনিপন্থী এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এ সহিংসতা সম্পূর্ণ নতুন স্তরে পৌঁছে গেল। তারা সহিংসতাকে উসকে দিতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্রী বলেন, ‘তারা প্রতি রাতে ইহুদিবাদী আগ্রাসনের সম্মুখীন হচ্ছেন। সৌভাগ্যক্রমে আমি শারীরিকভাবে নিরাপদ, কিন্তু আমার বহু সহপাঠী নিরাপদ নয়।’
একজন ক্যাম্পাস রিপোর্টার জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে ওই সহিংসতার সময় টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। ডেইলি ব্রুইন পত্রিকার ডিলান উইনওয়ার্ডের মতে, ওই সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহের সময় ক্যাম্পাসের একজন সংবাদপত্রের প্রতিবেদক টিয়ার-গ্যাসের মুখে পড়েন।
তিনি জানান, ইসরায়েলপন্থী পাল্টা বিক্ষোভকারীরা রাত দশটা থেকে সেখানে হাজির হচ্ছিল। তারা আতশবাজি ও পানির বোতলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছুঁড়েছে।
এ দিকে, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান বিক্ষোভ আরো দানা বাঁধছে। গণগ্রেফতার ও বলপ্রয়োগের পরও এ বিক্ষোভ দমনে বরং যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্তত আরো ছয় দেশে।
যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএল এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তাবু গেড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউবেক ক্যাম্পাসে। দেশটির মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ হয়েছে মিসরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি জন কায়রো ক্যাম্পাসে। এছাড়া, ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো অ্যান্ড সারবোন ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ ক্যাম্পাস এবং ইতালির স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও হয়েছে বিক্ষোভ।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সপ্তাহ দুয়েক পূর্ব গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এ বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী শিবির বসিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে চলা এ বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। তারা বিক্ষোভে অংশ নেয়া শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছেন। কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এর মধ্যেও ক্যাম্পাসগুলোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় সমর্থন দেয়া ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে অভিযানে গাজায় যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বহু বিক্ষোভকারীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।