শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বে-টার্মিনাল ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের চুক্তি

বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী বন্দর পরিচালনাকারিরা বিনিয়োগ করছে। আমি সম্ভাবনা ও স্বপ্ন দেখি, একটি সময় আসবে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের অন্য কোন দেশে এর কার্যক্রম চালাবে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ঢাকায় হোটেল ওয়েস্টিনে ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পসহ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা স্মারকপত্র (এমওইউ) সই’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লা আলী আব্দুল্লা কাসিফ আল মৌদি, আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল অফিসের রিজিওনাল চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আহমেদ আল মুতায়া বক্তৃতা করেন।

সমঝোতা স্মারকপত্রে সই করেন মোহাম্মদ সোহায়েল ও আবুধাবী পোর্টস গ্রুপের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই। স্মারকপত্র অনুযায়ী, আরব আমিরাতের আবুধাবী পোর্টস গ্রুপ বে-টার্মিনাল প্রকল্পসহ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে। তারা অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে মেরিটাইম সেক্টরে আমাদের যে যাত্রা, সেটিকে পুনর্জীবিত ও উজ্জীবিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সময়ে সমুদ্র ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর গেল ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক বন্দরের সক্ষমতা অর্জন করেছে। মংলা বন্দরের আপগ্রেডেশন হচ্ছে। মংলা বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের মত সক্ষমতা অর্জন করবে। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়েছে। এটা একটা নয়া অনুভূতি। পূর্বে মাদার ভেসেলে পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরের উপর নির্ভরশীল হতে হত। বর্তমানে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হচ্ছে। এতে করে নির্ভরশীলতা কমে যাবে। মাতারবাড়ি বন্দর আঞ্চলিক ‘হাব’-এ পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য সৌদি আরবের রেড সী গেটওয়ে টার্মিনালের সঙ্গে চুক্তি সেই হয়েছে। খুব শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বে টার্মিনাল নির্মিত হলে ২৪ ঘন্টা জাহাজ আসা যাওয়া করবে। জোয়ার ভাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। চট্টগ্রাম বন্দর অন্য ধরনের উচ্চতায় চলে যাবে। বে টারমিনালের সঙ্গে রোড, রেলওয়ে কানেক্টিভিটি থাকবে। পণ্য পরিবহন সহজলভ্য হবে। শুধুমাত্র আবুধাবী বন্দরের জন্য নয়, আমাদের জানালা খোলা আছে। দেশের যে কোন বন্দরে বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেব। বেটার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করতে চাই।’

বলে রাখা ভাল, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগরের তীরে ‘বে- টার্মিনাল’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ‘বে- টার্মিনাল’ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের পর সেখানে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য ২০১৭ সালে কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। গেল ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চূড়ান্ত মাস্টার প্ল্যানের মোড়ক উন্মোচিত হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী, মাস্টার প্ল্যানের এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুইটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। তিনটি টার্মিনালের দৈর্ঘ্য চার দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। মাস্টার প্ল্যানে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়। চ্যানেলে যথোপযুক্ত নাব্যতা থাকায় সেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের ও ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। আবহাওয়া ও সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বে- টার্মিনাল থেকে বহিঃনোঙ্গরের দূরত্ব এক কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আবুধাবী পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। এক হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি কন্টেইনার টার্মিনাল সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং অপরটি দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড অর্থায়ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ব্রেক ওয়াটার এবং এক্সেস চ্যানেল ড্রেজিং করবে বিশ্ব ব্যাংক। বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি এরমধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫০০ দশমিক ৬৯ একর সরকারি খাস জমি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বছরে ৫০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০২৬ সালে অপারেশনে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।