ঢাকা: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের পূর্বে আরো দুই বার খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল। দুই দফায় হত্যাকারীদের পাতা ফাঁদে পা না দেয়ায় বেঁচে যান তিনি।
শনিবার (২৫ মে) মিন্টো রোডে ডিবির কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ৷
হারুন বলেন, ‘গেল জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ও চলতি বছরের জানুয়ারিতেও তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল মূল মাস্টার মাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ও আমানউল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। কিন্তু, বার বার তাদের পাতা ফাঁদে পা না দেয়ায় বেঁচে যান আনার।’
ডিবি পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, গেল ১৩ মে শাহীনের ফাঁদে পা দেয়ার পরে আনারকে আপত্তিকর ছবি ব্যবহারে জিম্মি করা ও তার বাংলাদেশ ও কলকাতার বন্ধুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, তার ওপর অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগ করার কারণে জ্ঞান না ফেরায় খুন করা হয়।
ডিবির প্রধান বলেন, ‘আনার খুনের ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল ঢাকায় কাজ করছে। পাশাপাশি, আমাদের হাতে গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা দুইটি ব্যাপার পেয়েছি। দুইটি গ্রুপ এখানে কাজ করেছে। একটি গ্রুপ মদদ দিয়েছে, আরেকটি গ্রুপ বাস্তবায়নে কাজ করেছে।’
পুলিশের এ কর্মকর্তার ভাষ্য, এ ঘটনার মদদদাতা আক্তারুজ্জামান শাহীন গেল ৩০ এপ্রিল কলকাতায় তিন সদস্যকে নিয়ে যান। শাহীন ১০ মে পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে কিলিং মিশন বাস্তবায়নের মূলনেতা পূর্ব বাংলা কমিউনিস্টের নেতা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূইয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে দেশে চলে আসেন। এ আমানুল্লাহ ভুইয়া নাম ব্যবহার করে ভারতে গিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। যেহেতু ভারতীয় পুলিশ আমাদের এখানে কাজ করছে, তাদের কাজ শেষ হলে আমরাও কলকাতায় যাব।’
কী কারণে খুন করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, ‘এ খুনের পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে। এ খুন বাস্তবায়নে সকলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তাতে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি গলাকাটার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে, বহু ব্যাপার রয়েছে। কী কারণে খুন সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কী কারণে এ খুন, সেটি আরো তদন্ত শেষে বলা যাবে।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘পূর্বেও আনোয়ারুলকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচনের পূর্বেও তারা খুনের চেষ্টা করেছে। তখন তারা ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয় বার ১৭-১৮ জানুয়ারির মধ্যেও আনোয়ারুল কলাকাতায় যান। সেই সময়ে খুনিরা তাকে খুনের উদ্দেশ্যে কলকাতায় যায়। কিন্তু, হোটেলে থাকার কারণে সেই বার তারা ব্যর্থ হয়। তৃতীয় ধাপে তারা এসে সফল হয়েছে।’
‘তবে, খুনের পূর্বে তাদের পরিকল্পনা ছিল আনোয়ারুলকে জিম্মি করা। এরপর তার আপত্তিকর ছবি তুলে দুই দিন ব্লাকমেইল করে হুন্ডির মাধ্যমে ও কলকাতায় থাকা তার বন্ধুদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার। কিন্তু, আনার ওই বাসায় যাওয়ার পরে তার মুখে চেতনানাশক স্প্রে করায় জ্ঞান হারান। অজ্ঞান অবস্থায় আনারের আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। কিন্তু, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল খুন করা। আদায় করা টাকা খুনিদের ভাগ করে দেয়ার কথা ছিল। তবে, স্প্রে করায় জ্ঞান না ফেরায় ব্ল্যাকমেইলের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে লাশ গুমের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।’
‘এরপর তারা মোবাইলগুলো বিভিন্নস্থানে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি খুনিদের একজন আনারের চারটি মোবাইল বেনাপোল এলাকায় নিয়ে আসে। এখানে এসে আনারের প্রতিপক্ষকে চারটি মোবাইল থেকে ফোন করা হয়। ফোন করে বলা হয় ‘শেষ’। এর লক্ষ্য ছিল, এ ফোনের সূত্র ধরে যেন পুলিশ প্রতিপক্ষকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। খুনিদের যেন না পায়।’
সোনা চোরাচালান চক্রের কোন সম্পৃক্ততা আছে কি ন জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোন কিছুই বলা যাবে না। তবে, বহু ব্যাপার আছে। তদন্ত শেষ করে আমরা আপনাদের জানাতে পারব।’
খুনের ঘটনায় কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কীসের ভিত্তিতে খুনের কথা বলা হচ্ছে জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘আমরা বহু তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখন প্রকাশ করছি না। প্রমাণ পেয়েই কলকাতায় খুনের মামলা হয়েছে। আমাদের দেশে একটি অপহরণ মামলা হয়েছে। কলকাতায় মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। নিশ্চয়ই তারা আলামত পেয়েছে। কলকাতায় হওয়া খুনের মামলার তদন্তে আমরাও যাব।’