ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র: সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-২০ ক্রিকেটে ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাতে টি-২০ বিশ্বকাপের নবম আসরের ১১তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান। উত্তরে ২০ ওভারে তিন উইকেটে ১৫৯ রান করে ম্যাচ টাই করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি। সেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এক উইকেটে ১৮ রান করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯ রানের লক্ষ্যে এক উইকেটে ১৩ রানের বেশি তুলতে না পারলে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হয় পাকিস্তানের। কানাডার পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপে দুই ম্যাচে পূর্ণ চার পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। বোলিং শুরু করে ২৬ রানে পাকিস্তানের তিন উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিক বোলাররা। ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নয় রানে আউট করেন পেসার সৌরভ নেত্রভালকার। তিন নম্বরে নামা উসমান খানকে তিন রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার নোশতুশ কেনিজিগে। তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে পেসার আলি খানের শিকার হন ১১ রান করা ফখর জামান। শুরুতেই চাপে পড়া পাকিস্তানকে লড়াই ফেরান অধিনায়ক বাবর আজম ও শাদাব খান। উইকেটে সেট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বোলারদের উপর চড়াও হন তারা। এতে ১২ ওভারে ৯৩ রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। ১৩তম ওভারে শাদাবকে আউট করে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন কেনিজিগে। একটি চার ও তিনটি ছক্কায় ২৫ বলে ৪০ রান করেন শাদাব। বাবর-মাদাব চতুর্থ উইকেটে ৪৮ বলে ৭২ রান যোগ করেন। শাদাবের বিদায়ে ক্রিজে এসেই কেনিজিগের বলে লেগ বিফোর আউট হয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন আজম খান। ৯৮ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর বাবরের সঙ্গে ১৮ বলে ২৭ ও শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে ১৪ রান যোগ করে পাকিস্তানকে লড়াকু সংগ্রহের পথে রাখেন ইফতিখার। ওপেনার হিসেবে নামা বাবর তিনটি চার ও দুইটি ছক্কায় ৪৩ বলে ৪৪ ও ইফতিখার তিনটি চারে ১৮ রান করেন। এ ইনিংস খেলার পথে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিরাট কোহলিকে টপকে সর্বোচ্চ রানের মালিক হন বাবর। ১২০ ম্যাচে বাবরের রান এখন চার হাজার ৬৭। ১১৮ ম্যাচে কোহলির রান ৪০৩৮।
ইনিংসের শেষ দিকে আফ্রিদির একটি চার ও দুইটি ছক্কায় গড়া ১৬ বলে অপরাজিত ২৩ রানের সুবাদে সাত উইকেটে ১৫৯ রান পায় পাকিস্তান। ৩০ রানে তিন উইকেট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সফল বোলার কেনিজিগে। ১৮ রানে দুই উইকেট নেন নেত্রভালকার।
১৬০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে পাঁচ ওভারে ৩৬ রান তুলে ভাল শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। পাওয়ার প্লের প্রথম বলে স্টিভেন টেইলরকে ১২ রানে আউট করে পাকিস্তানকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার নাসিম শাহ। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে পাকিস্তানের বোলারদের ওপড় আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল ও আন্দ্রিস গাউস। দুইজনের ৪৮ বলে ৬৮ রানের জুটিতে ১৩তম ওভারে শত রানে পৌঁছে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় নয় উইকেট হাতে নিয়ে সাত ওভারে ৫৬ রান দরকার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে গাউসকে বিদায় দিয়ে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন হারিস রউফ। পাঁচটি চার ও একটি ছক্কায় ২৬ বলে ৩৫ রান করেন গাউস। পরের ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ আমিরের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন সাতটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৮ বলে ৫০ রান করা প্যাটেল। পরপর দুই ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের দুই সেট ব্যাটারকে বিদায় করে দারুনভাবে ম্যাচে ফিরে পাকিস্তান। তবে, হাল ছাড়েননি পূর্বে ম্যাচের কানাডার বিপক্ষে ৪০ বলে ৯৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলা অ্যারন জোন্স ও নীতিশ কুমার। ১৬ থেকে ১৯তম ওভারে ৩০ রান তুলেন তারা। এতে শেষ ওভারে জয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৫ রান। হারিস রউফের প্রথম তিন বলে তিন রান নেন জোন্স ও নীতিশ। চতুর্থ বলে ছক্তা মারেন জোন্স। পঞ্চম বলে এক রান নিলে, শেষ বলে পাঁচ রান দরকার পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের। শেষ বলে চার মেরে ম্যাচ টাই করেন নীতিশ।
চতুর্থ উইকেটে ৩৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৮ রানের জুটি গড়েন জোন্স-নীতিশ। দুইটি করে চার-ছক্কায় জোন্স ২৬ বলে অনবদ্য ৩৬ রান করেন। একটি চারে ১৪ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন নীতিশ। পাকিস্তানের আমির, নাসিম ও রউফ একটি করে উইকেট নেন।
আমিরের করা সুপার ওভারে তিনটি ওয়াউড ও মাত্র একটি চারে এক উইকেটে ১৮ রান তুলে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯ রানের লক্ষ্যে নেত্রভালকার করা প্রথম তিন বলে ইফতিখারকে হারিয়ে পাঁচ রান তুলে পাকিস্তান। পরের তিন বলে আসে সাত রান। শেষ বলে সাত রানের দরকারে পাকিস্তান এক রানের বেশি না পেলে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম অঘটনের জন্ম দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচ সেরা হন যুক্তরাষ্ট্রে প্যাটেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৫৯/৭, ২০ ওভার (বাবর ৪৪, শাদাব ৪০, কেনিজিগে ৩/৩০)।
যুক্তরাষ্ট্র: ১৫৯/৩, ২০ ওভার (প্যাটেল ৫০, জোন্স ৩৬*, আমির ১/২৫)।
ফল: টাই (সুপার ওভারে জয়ী যুক্তরাষ্ট্র)।
ম্যাচ সেরা: মোনাঙ্ক প্যাটেল (যুক্তরাষ্ট্র)।