তেহরান, ইরান: ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান জয়ী হয়েছেন। তিনি দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত ভোটে কট্টরপন্থী সাইদ জালিলিকে হারিয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মোহসিন ইসলামি বলেছেন, ‘তিন কোটির বেশি ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন এক কোটি ৭০ লাখের বেশি ভোট। আর সাইদ জালিলি পেয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোট।’ মোট ৪৯ দশমিক আট শতাংশ লোক ভোট দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গেল সপ্তাহে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। এ প্রেক্ষিতে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান।
প্রথম দফার ভোটে মাসুদ পেজেশকিয়ান ৪২ শতাংশ ভোট ও জালিলি পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ ভোট। প্রথম দফায় ছয় কোটি দশ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিল; যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর যে কোন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে কম।
প্রথম দফায় পেজেশকিয়ান ও জালিলি ছাড়া আরো দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তারা হলেন কট্টরপন্থী পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ ও কট্টরপন্থী মোস্তফা পুরমোহাম্মদি। গালিবাফ ১৩ দশমিক আট শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। আর পুরমোহাম্মদি পেয়েছিলেন এক শতাংশের কম ভোট।
মাসুদ পেজেশকিয়ানের বয়স ৬৯ বছর। তিনি হৃদ্রোগবিষয়ক সার্জন। ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থী জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে। প্রাক্তন দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে, ৫৮ বছর বয়সী জালিলি পশ্চিমাবিরোধী অবস্থানে অনড়। তিনি কট্টরপন্থী সমর্থকদের যথেষ্ট সমর্থন ধরে রেখেছেন। অন্য রক্ষণশীল নেতাদের কাছ থেকেও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ইরানে আগামী বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের চার বছরের মেয়াদ শেষে ভোট অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু, গেল ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হলে পদটি শূন্য হয়। ফলে আগাম নির্বাচনের বিকল্প ছিল না। সংবিধান অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে নয়া নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ দিকে, পেজেশকিয়ান দেশটিতে দীর্ঘ দিনের ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরার বিষয়টি দেখার জন্যে পুলিশের টহলেরও ঘোর বিরোধী; যা পুলিশি হেফাজতে ২০২২ সালে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত।