রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

কোটার আন্দোলন নিয়ে সরকার আচানক কঠোর

শুক্রবার, জুলাই ১২, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এক মাসের অধিক সময় ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে চলতি মাসের শুরু থেকে সড়ক-মহাসড়ক এমনকি রেলপথ অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করলেও সেই অর্থে কোন বাধা দেয়নি পুলিশ। সরকার বা ক্ষমতাসীনেরাও মোটামুটি চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আচমকা বদলে গেল পরিস্থিতি। সব পক্ষের গলা চড়া। সকলে জোরেশোরে জানিয়ে দিল, শিক্ষার্থীদের আর রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পূর্বের দিন বুধবারই (১০ জুলাই) ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকাসহ পুরো দেশে রাস্তায় ‘বাংলা ব্লকেড’ বা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন। সে অনুযায়ী তাদের প্রস্তুতির মধ্যেই সকালে পুলিশ জানিয়ে দেয়, তাদের আর রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন, তারপরও আন্দোলনের কোন ‘যৌক্তিকতা নেই’। আন্দোলনকারীদের সড়কে বসতে দেয়া হবে না। তারা রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে ‘প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে’ বাধ্য হবে পুলিশ।

ঢাকার মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্রকে বলবৎ রেখে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যে কারণে এ চার সপ্তাহ কোটা নিয়ে আন্দোলন করার কোন অবকাশ বা প্রয়োজন আছে বলে ডিএমপি মনে করে না। রাস্তায় নেমে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দুপুরের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেখানেও বলা হয়, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে ছাত্রলীগ।’

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক ও আইনগত সমাধান চায়; কিন্তু রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীরা এ আন্দোলনকে প্রলম্বিত করতে চাইছে। আন্দোলনকে প্রলম্বিত করা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছু নয়।’

সাদ্দাম হোসেন আরো বলেন, ‘আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে জিম্মি করে জনসাধারণের জীবনযাত্রার ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার চেষ্টা করা হলে ছাত্রলীগ রুখে দাঁড়াবে।’

এ দিকে, আন্দোলনকারীরা সীমা লঙ্ঘন (লিমিট ক্রস) করছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আদালতের যে নির্দেশনা তাতে শিক্ষার্থীরা মনে করেছেন, তাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে জন্য তারা রাস্তায় চলে এসেছেন। পুলিশকে আমরা বলেছি, তাদের ডিম্যান্ড যেটা আছে, সেটা আমরা শুনব। কিন্তু, শোনারও একটা লিমিট বোধ হয় থাকে। তারা বোধ হয় এগুলো ক্রস করে যাচ্ছেন।’

শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা শিক্ষিত, মেধাবী। তারা কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবেন? পুলিশের অ্যাকশনটা কখন আসে? যখন অপারগ হয়ে যায়, যখন অগ্নিসংযোগ করতে যায়, যখন ধ্বংস করতে যায়, যখন জানমালের নিশ্চয়তার অভাব হয়ে যায়, যখন অনৈতিকভাবে কোন সিচুয়েশন সৃষ্টি হয়-সেগুলো করলে পুলিশ বসে থাকবে না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পূর্বে এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘পানির মত একটি সহজ জিনিসকে জটিল করা হচ্ছে। কিছু কুচক্রী মহলের ইন্ধনের কারণে এমন হচ্ছে।’

কারা শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন- জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন চায় না, যারা সেই সময়ে দেশে লুটপাট করেছে, যারা দেশটাকে জঙ্গিবাদ করেছে, তারা চাচ্ছে না। তারা বসে আছে, তারা ব্যর্থ, তারা যে কোন বিষয়কে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চায়।’