রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ‘সহিংস দমন-পীড়নে’ নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

শুক্রবার, জুলাই ২৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

যুক্তরাষ্ট্র: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর নিন্দা জানিয়েছে উত্তর আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলারদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলারস ইন নর্থ আমেরিকা (বিসিএসএনএ)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কার ও হত্যাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবির প্রতিও সমর্থন জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি; যারা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য যথাযথভাবে প্রতিবাদ করছে এবং এখন নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ও চলমান আইনি হয়রানির বিচারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যায্য কোটা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। এছাড়া, বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কার ও হত্যাকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্রমবর্ধমান দাবির প্রতিও আমরা সমর্থন জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে রায় দিলেও এ সিদ্ধান্তটি অনেক দেরিতে এসেছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে এ তরুণরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবির কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সরকার প্রথমে বিক্ষোভকারীদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি শক্তি মোতায়েন করে ও খুব কাছ থেকে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়।’

এ পর্যায়ে বিবিসির প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীরা যখন পুলিশের দিকে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করছিল, তখন পুলিশ শটগানের গুলি, টিয়ার-গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে এর উত্তর দিচ্ছিল, গুলি চালানো হচ্ছিল হেলিকপ্টার থেকেও। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ নিরস্ত্র বিক্ষোভকারী পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলীয় সংগঠনগুলোর লোকজনের হাতে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও, অজ্ঞাত মৃত্যু ও হাজার হাজার গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা এ দুর্দশাকে আরো দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।’

বিবৃতিদাতারা বলছেন, ‘পরবর্তী ১৯ জুলাই সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। মিডিয়া ও টেলিকম কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে ও ইন্টারনেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।’

এখন সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর সেই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বিবরণ উন্মোচিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, ‘এটি দেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ভবিষ্যতকে অস্পষ্ট করে তুলবে। এখন পর্যন্ত দায় স্বীকার করে ক্ষমতাসীন নির্বাহীদের বরখাস্ত করার পরিবর্তে সরকার তার স্বাভাবিক কায়দায় অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছে এবং এ বিশৃঙ্খলার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও দায়ী করেছে। এটা দুঃখজনক।’

ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সবগুলো জাতীয় আন্দোলনের ছাত্রসমাজের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ক্ষমতাসীন দল পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এবং নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমসহ অন্যান্য জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজেদের স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত করেছে। ফলে, ছাত্র বিক্ষোভ এখন স্বৈরাচারী নিপীড়ন, দুর্নীতি ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমরা এটাকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।’

এ অবস্থায় প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিসিএসএনএর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বিক্ষোভ প্রশমনে ব্যর্থতার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং এর প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করি ও নিন্দা জানাই, যার ফলে বহু নিরীহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। আমরা কর্তৃত্ববাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে এ ভয়াবহ সহিংসতা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেয়ার জন্য বিদ্যমান সব উপায় ব্যবহার করে।’

একইসাথে এ আন্দোলনে ‘সরকারের নির্দেশে নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর’ জন্য বিচার দাবি করে দায়ীদের পদত্যাগ দাবি করেন বিবৃতিদাতারা। সেইসাথে নিপীড়িত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে মোট ৫০ জন শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক ও শিক্ষার্থীরা সই করেছেন। এদের মধ্যে শিক্ষকরা হলেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের কমিউনিকেশন বিভাগের আনিস রহমান, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট অসওয়েগোর খায়রুল ইসলাম, নিউইয়র্ক বার্ড কলেজের ফাহমিদুল হক, ফ্রেমিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির জাহেদুর আরমান, কর্নেল ইউনিভার্সিটির জামাল উদ্দিন, ক্রেইটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসেক রহমান, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা ইন হান্টসভিলের নূর ই মকবুল, ওয়েস্টার্ন ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদ হোসেন, জেমস ম্যাডিসন ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমরান মাজিদ, সেন্ট্রাল নিউ মেক্সিকো কমিউনিটি কলেজের দিদারুল ইসলাম ও সাউথইস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদিজা তুল জান্নাত।

পিএইচডি গবেষক ও শিক্ষার্থীরা হলেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামার শাহ জাহান শুভ, ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটির মুহাম্মদ জাকারিয়া, মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির বাচ্চু শেখ, মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির একেএম জামীর উদ্দীন, কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির মো. রেজাউল হক, ইউনিভার্সিটি অব নর্দান ইলিনয়র মোস্তাক আহমেদ, বল স্টেট ইউনিভার্সিটির মো. সুমন আলী, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার মোহাম্মদ রশিদ, ইউনিভার্সিটি অব ওরেগনের নিশাত পারভেজ, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির সাজেদুল ইসলাম, ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটির নাজমা আখতার, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যাল্ডের নাঈমুল হাসান, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপির শেরিন ফারহানা মনি, দ্য ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট শিকাগোর মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান, পয়েন্ট পার্ক ইউনিভার্সিটির দাউদ ঈসা, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার আহমেদ শাতিল, বোওলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটির সুদীপ্ত শর্মা, কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির আবু আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অব মন্টানার নাজিফা ফারহাত, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় শিকাগোর প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাসের নুসরাত চৌধুরী, টেক্সাট টেক ইউনিভার্সিটির মিনহাজ উদ্দিন, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার এইচএম মুর্তজা, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড কলেজ পার্কের মো. মাঈন উদ্দিন রনি, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটির মেহেদি হাসান, ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটির মো. খাদিমুল ইসলাম, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সুলতানা ইসমেত জেরিন, মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি ম্যানকাটোর মো. হোসেন, ওয়েস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটির হামজা মোস্তফা, ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের মুশফিক ওয়াদুদ, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপির রুবালিয়া জান্নাত, সাউদার্ন মিসের হাসান ফয়সাল, ইউনিভার্সিটি অব নেভাদা রেনোর নূর হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আর্মহাস্র্টের গোপা কাইজার, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির মোতাসিম বিল্লাহ, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড’র মোহাম্মদ আলী, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপির আসাদুজ্জামান ও ইউনিভার্সিটি অব আরকানকাসের ফারজানা ফাহমি।