আব্দুল হান্নান চৌধুরী: চলতি বছরের গেল ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অপরিহার্য ছিল একটি বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা ও বাকশালী সংবিধান বাতিল করা। কিন্তু, তা না করে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শে সংবিধানের ধারাবাহিকতায় গঠিত হল অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি দাবি ছিল, কোন সংস্কার ছাড়া একটি দ্রুত নির্বাচন। তাই, তারা নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারকে বার বার চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা বলছে, ‘রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া এ মুহুর্তে কোন নির্বাচন নয়।’ তাছাড়া, এটাও দাবি করছে যে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রচিত এ বাকশালি সংবিধানও পরিবর্তন করতে হবে।
এরই মধ্যে হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টের মন্তব্য নিয়ে গোটা দেশের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দাবি উঠেছে, প্রসিডেন্ট চুপ্পুকে অতি দ্রুত সরিয়ে দেশ প্রেমিক প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেয়ার। কিন্তু, এতে বাধ সাধে বিএনপি। বিএনপি বার বার বলছে, ‘প্রসিডেন্ট চুপ্পুকে সরালে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে।’ তাছাড়া, তারা এ বাকশালী সংবিধানকেও পরিবর্তন করতে কেনভাবেই রাজি নয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সংস্কার প্রস্তাবে জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় ঐক্যমত পোষণ করেছে শুধু বিএনপি ছাড়া। কথা হল পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির কোন দোসর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বসে থাকতে পারে না। কারণ, যে কোন মুহুর্তে আওয়ামী লীগ চুপ্পুকে দিয়ে একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। তাছাড়া, যে সংবিধান দিয়ে আওয়ামী লীগ পুরো দেশে ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েম করেছে, মানুষের অধিকার ও বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে, সে সংবিধান কখনো জারি থাকতে পারে না।সরকারসহ সব রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করেই নির্বাচনসহ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। তা না হলে শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানী করা হবে।
জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে চুপ্পুকে রেখে বাকশালী সংবিধান অব্যাহত রেখে ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, সে সরকার নির্ঘাত বিএনপির মোড়কে আওয়ামী ডুপ্লিকেট ফ্যাসিবাদী সরকারই হবে। আওয়ামী লীগ প্রচারণা চালাচ্ছে যে, ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে গণহত্যা হয়েছে, তা বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা করে সরকারের উপর দায় চাপাচ্ছে। আওয়ামী ডুপ্লিকেট ফ্যাসিবাদী সরকার তখন এ বিষয়টাকে স্টাবলিশ করার চেষ্টা করবে ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহীতার অভিযোগ এনে সবকটিকে শূলে চড়াবার ব্যবস্থা করবে। আর আওয়ামী লীগ গণহত্যার দায় থেকে পার পেয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ ফের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবে। কারণ, ভারত এ দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপির ভারত পন্থি গ্রুপকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
বিএনপির মধ্যকার ভারত পন্থি গ্রুপ ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সক্রীয় ভুমিকা পালন করছে। মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা চুপ্পুর অপসারণ প্রশ্নে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলেছেন। তাছাড়া, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারেও বিএনপির অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেই ফেললেন, সরকার কার সাথে আলাপ করে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করল, ভবিষ্যতে এ সরকার ছাত্রদলকে নিষিদ্ধ যে করবে না, তার কি গ্যারান্টি আছে। সবকিছু মিলে বিএনপিও আওয়ামি লীগের সুরে কথা বলছে।নানকের ভিডিও বার্তায় এক বারের জন্য হলেও বিএনপির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এতে বুঝা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট চুপ্পু প্রসঙ্গ, সংবিধান ও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বিএনপির সাথে একটা বুঝা পড়া হয়েছে। সে জন্য অমূলক নয় যে, ভবিষ্যতে বিএনপির মোড়কে বাংলাদেশে আবার নতুন এক ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ও জনগণের উচিত সময় থাকতেই জুলাই বিপ্লবের স্পিডকে ধারণ করে দ্রুত প্রেসিডেন্ট চুপ্পুকে অপসারণ, সংবিধান সংশোধন ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলা।
লেখক: গবেষক, চট্টগ্রাম