লেবানন: ইসরাইল বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভোরে লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ইরানের হুমকি’ নিয়ে ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরই এ হামলা চালানো হল। সংবাদ এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিজয়ের পর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো প্রথম বিশ্ব নেতাদের মধ্যে নেতানিয়াহু অন্যতম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এ পুনঃনির্বাচিত হওয়াকে ‘ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তন’ বলে অভিহিত করেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিবৃতিতে বলেছে, ‘বুধবার (৬ নভেম্বর) ফোনে দুই নেতা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন এবং ইরানের হুমকি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ইসরাইলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ বৈরুতের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর প্রধান ঘাঁটিতে হামলা চালায়।
হামলার পূর্বে ইসরাইলের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ চারটি এলাকা ও এগুলোর আশপাশের স্থান থেকে সাধারণ মানুষকে অন্যত্র চলে যাওয়ার আদেশ জারি করেছিল।’
লেবাননের পূর্বাঞ্চলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বুধবার (৬ নভেম্বর) ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন নিহত হয়েছে, উদ্ধারকারীরা জীবিতদের সন্ধানে ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চালাচ্ছে।’ মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেকা উপত্যকা ও বালবেকে ইসরাইলিদের উপর্যুপরি হামলায় ৪০ জন নিহত ও ৫৩ জন আহত হয়েছে।’
হিজবুল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফল যুদ্ধের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। ট্রাম্পের বিজয়ের পূর্বে রেকর্ডকৃত পরে প্রচারিত টেলিভিশন ভাষণে হিজবুল্লাহর নতুন প্রধান নাইম কাসেম বলেন, ‘আমাদের হাজার হাজার প্রশিক্ষিত প্রতিরোধ যোদ্ধা আছে। আমরা লড়াই করার জন্য প্রস্তুত।’ গেল সপ্তাহেও হিজবুল্লাহ মহাসচিব কাসেম সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ইসরাইলকে ‘যে কোন স্থানে’ হামলা চালানো হবে।’
হিজবুল্লাহ বুধবার (৬ নভেম্বর) ঘোষণা করেছে, তাদের কাছে ইরানের তৈরি ফাতাহ ১১০ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে সামরিক বিশেষজ্ঞ রিয়াদ কাহওয়াজি হিজবুল্লাহর ‘সবচেয়ে নির্ভুল’ অস্ত্র হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
গাজা ও ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র লেবাননে সংঘাত অবসানের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত বার বার ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এক দিকে নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে, অন্য দিকে ইসরাইলের প্রতি তার রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। অনেকেই ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাকে ইসরাইলের জন্য সম্ভাব্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন। পূর্ব জেরুজালেমের আবু মুহাম্মাদ নামের ব্যক্তি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্ট ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের অধীনে পরিস্থিতির অবনতি ছাড়া আর কিছুই হবে না।’
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প নিজেকে ইসরাইলের শক্তিশালী মিত্র হিসাবে দাবি করেছিলেন। এমনকি তিনি এও বলেছিলেন যে, বাইডেনকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলকে তার ‘অভিযান সম্পন্ন করতে’ দেওয়া উচিত। পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন আমাদের নরকের দিকে নিয়ে যাবে।’
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ নিউজ দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৬ শতাংশ ইসরাইলি ট্রাম্পের জয়ের আশা করছিল। বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, ‘নেতানিয়াহুও ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন চেয়েছিলেন। তাদের দীর্ঘকালের ব্যক্তিগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।’
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তরিত করেন এবং অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেন। এছাড়াও ট্রাম্প তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তির অধীনে ইসরাইল ও বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সহায়তা করেন।
তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের আচরণের’ বিষয়ে ট্রাম্পের পক্ষ নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম আরব রাষ্ট্র ও গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী মিশর ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ফোনে ট্রাম্পকে বলেছেন, কায়রো ‘মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা, শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখতে’ তার সঙ্গে কাজ করবে।’
জাবালিয়া থেকে গাজা শহরে বাস্তুচ্যুত হওয়া ৬০ বছর বয়সী মামদুহ আল-জাদবা বলেন, ‘আমাদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট নেই, আমরা শান্তি চাই।’
জাতিসংঘ বুধবার (৬ নভেম্বর) বলেছে যে, ‘গাজায় তার পোলিও টিকাদান অভিযান শেষ হয়েছে, যুদ্ধ সত্ত্বেও সেখানে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।’
হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক নির্বিচার হামলায় গাজায় ৪৩ হাজার ৩৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ এ তথ্যকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।