ঢাকা: বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক এক শতাংশ মানুষ মনে করেন, এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। যদিও আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ দশমিক নয় শতাংশ মানুষ বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে, তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।’ আর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক নয় শতাংশ উত্তরদাতার।’
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার তত্ত্বাবধানে করা জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভুত্থানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে ১৩-২৭ অক্টোবর ভয়েস অব আমেরিকা দেশব্যাপী জরিপ করে।
জরিপটি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অব আমেরিকার ঠিক করে দেয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ অ্যান্ড) প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইংয়ের মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সি এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।
জরিপটি করা হয়, র্যান্ডম ডিজিটাল ডায়ালিং পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ টেলিকম্যুনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের ২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রকাশিত অফিসিয়াল টেলিফোনে প্ল্যান থেকে বাংলাদেশের মোবাইল নম্বরগুলোর সম্ভাব্য সব ধরনের কম্বিনেশন থেকে করা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেডের নিজস্ব ডেটা-বেইজ থেকে জরিপটির স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। একটি আর-বেইজড প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সিম্পল র্যান্ডম স্যাম্পলিংয়ের (এসআরএস) মাধ্যমে জরিপটির নমুনা বাছাই করা হয়েছে।
জরিপ পরিচালনা কাজে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চের ঢাকা অফিসের কল সেন্টার থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ফোন করা হয়।
ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, ‘জরিপটিতে মার্জিন অব এরর তিন দশমিক এক শতাংশ। জরিপটির উত্তরদাতারা প্রায় একমাস আগে যেহেতু তাদের মতামত জানিয়েছেন, তাই এখন জরিপটি করলে এর ফলাফল অনেকক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারে।
জরিপে অংশ নেয়া শহরের জনগণের ৬০ দশমিক চার শতাংশ ও গ্রামে বাস করেন তাদের ৬১ দশমিক চার শতাংশ আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন চান। জরিপে অংশগ্রণকারী পুরুষদের ৫৭ দশমিক তিন শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ নির্বাচন চান এক বছরের মধ্যে।
তরুণদের মধ্যে (১৮-৩৪ বছর বয়সি) ৬২ দশমিক চার শতাংশ এক বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন চান আর ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন চান ৫৯ দশমিক আট শতাংশ।
শহরাঞ্চলের ১৮ দশমিক নয় শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮ দশমিক ছয় শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী চান, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া পুরুষদের ২০ দশমিক তিন শতাংশ ও নারীদের ১৭ দশমিক এক শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের ১৫ দশমিক দুই এবং ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ দশমিক চার শতাংশ মনে করেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।
১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের দশ দশমিক তিন, গ্রামের আট, পুরুষদের ১২ নারীদের পাঁচ দশমিক দুই, তরুণদের (১৮-৩৪ বছর বয়সি) আট দশমিক ছয় এবং ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সিদের মধ্যে আট দশমিক ছয় শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন, শহরের ছয় দশমিক দুই, গ্রামের পাঁচ দশমিক সাত, পুরুষদের ছয় দশমিক নয়, নারীদের চার দশমিক আট, তরুণদের (১৮-৩৪ বছর বয়সি) সাত দশমিক ৬, ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সিদের চার শতাংশ মানুষ।
সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চান ৬৫ দশমিক নয় শতাংশ: বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক নয় শতাংশ) মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক নয় শতাংশ উত্তরদাতার।
এক দশমিক ছয় শতাংশ উত্তরদাতা এ বিষয়ে কিছু জানেন না এবং দশমিক পাঁচ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা মনে করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার যে যে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন, সেসবগুলো সংস্কার শেষ করেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত তাদের অধিকাংশ বিচার বিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কারগুলো করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৬ দশমিক পাঁছ শতাংশ উত্তরদাতা। পুলিশ সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ দশমিক তিন শতাংশ, বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে ৯৫ দশমিক তিন শতাংশ এবং অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার এর পক্ষে ৯৬ দশমিক চার শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার চান ৯২ দশমিক পাঁচ শতাংশ উত্তরদাতা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় দেশ পরিচালনায় ভাল করছে। বাংলাদেশের ৫৮ দশমিক চার শতাংশ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় দেশ পরিচালনায় ভাল করছে।
যদিও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৪০ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ করছে বা একই রকম পারফর্ম করছে। যারা মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে দেশ শাসনে খারাপ করছে, তাদের সংখ্যা ২০ দশমিক চার শতাংশ আর একই রকম করছে বলে মত দিয়েছেন ২০ দশমিক এক শতাংশ।
‘আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় ভাল, খারাপ নাকি একইরকম করছে?’- এই প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা এ মতামত দেন।
জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে দশমিক আট শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, তারা জানেন না। আর দশমিক তিন শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।