ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা বাতিল করেছে একটি ফেডারেল আদালত। ওয়াশিংটনের ডিসট্রিক্ট জাজ তানিয়া চুটকান সোমবার (২৫ নভেম্বর) মামলাটি বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন। সংবাদ বিবিসির।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ ফৌজদারি অভিযোগ এনেছিলেন বিশেষ প্রসিকিউটর জ্যাক স্মিথ। একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচার না চালানোর যে নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের রয়েছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করার আবেদন করেন। পরে বিচারক মামলাটি বাতিল করে দেন।
এর মানে হল, আগামী ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন, তখন তার বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে এ ফৌজদারি অভিযোগ আর থাকবে না। তবে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করলে নতুন করে অভিযোগগুলো আদালতে তোলা যাবে।
রাষ্ট্রের গোপন নথি সংরক্ষণে অনিয়মের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছিলেন জ্যাক স্মিথ। তার আবেদনে সে মামলাও আদালত খারিজ করে দিয়েছে। দুই মামলাতেই ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন।
২০২০ সালে নির্বাচনে হেরে হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নেওয়ার পর বড় ধরনের আইনি জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ট্রাম্পকে। এমনকি তাকে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তও হতে হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কোন প্রেসিডেন্টের জন্য নজিরবিহীন।
সেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হন ট্রাম্প। ভোটে হারার পর থেকে ভোট চুরি ও নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলতে থাকেন তিনি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ৬০টির বেশি মামলা হলেও আদালত সেগুলো খারিজ করে দেয়।
নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করা ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের কাছে সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশ করেন। ওই দিন ক্যাপিটল ভবনে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ছিল। ট্রাম্প তার সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ট্রাম্পের সমাবেশ থেকে তার কয়েক হাজার সমর্থক গিয়ে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। সেখানে দাঙ্গায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। এর ফলে ট্রাম্প দ্বিতীয় বার অভিশংসিত হন। ওই ঘটনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে দুইটি ফৌজদারি মামলা হয়।
ক্যাপিটল ভবনে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তাতে ধরে নেওয়া হয়েছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটেছে। তার বহু দাতা ও সমর্থক আর কখনো ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন।
চারটি ফৌজদারি মামলায় ৯১টা গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে নির্বাচনী দৌঁড় শুরু করলেও অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে ট্রাম্প গেল ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে ট্রাম্পই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয় বারের মত হোয়াইট হাউসে ফিরতে চলেছেন।