নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: দীর্ঘ ১৪ বছর পর দেশে যাচ্ছেন আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াস আহমেদ। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার অবতরনের কথা রয়েছে। দেশে ফিরে আগামী ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশে আমেরিকান ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা ও মত বিনিময় সভায় আয়োজক হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকবেন।
গিয়াস আহমেদ জানান, গেল ১৫ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, গনতন্ত্র হত্যাকারী ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন করেছে। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের নামে মিথ্য মামলা দেয়া হয়েছে। এই ১৫ বছর শেখ হাসিনা ভোট চুরি, ব্যাংক ডাকাতি ও দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। তার বাবার মৃত্যুর পর কয়েক দিন লাশ পড়ে থাকলেও দেশের জনগণ প্রতিবাদ মিছিল করেনি, জানাজায় আসেনি। সে জাতির উপর তিনি চরমভাবে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন এবং সেটিই করে দেখালেন। পর পর তিন বার ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকলেও তাকে দেশের মানুষ কখনোই ভোট দেয়নি। ভোটের মাধ্যমে তিনি পরাজিত হয়েছেন সাদেক হোসেন খোকার কাছে, তিনি পরাজিত হয়েছেন মেজর মান্নানের কাছে।’
গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি ইতিহাস বলে, যে দেশ এক বার স্বাধীন হয় সে দেশকে রক্ষা করার জন্য আজীবন রক্ত দিতে হয়। কারণ, হায়েনারা বার বার সে দেশের উপর শকুনের মত কু-দৃষ্টি দিয়ে থাকে। তাই, ২৪’-এর অভ্যুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন এবং যারা সামনে ও পিছন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সেই আহত ও শহীদ পরিবারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি থেকে যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অফ কমার্স, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে থাকাকালীন ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন করেছি। আমেরিকায় এসেও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। আপনারা জানেন, আমি বাংলাদেশ থেকে ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি। এখানে এসেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্রদল গঠন করি এবং আমি ছিলাম যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আমাদের হাত ধরেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার। বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ব্যাপক অবদান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি হোয়াইট হাউজ, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছে। মইনদ্দিন, ফখরুদ্দীনদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করেছি। যখন বাংলাদেশে কেউ সাহস পায়নি, তখন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে হোয়াইট হাউজ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত গড়ে তুলেছি।’
প্রবাসীদের প্রসঙ্গে গিয়াস আহমেদ বলেন, ‘আমরা যারা প্রবাসী আছি, আমাদের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন, তারা যেন প্রবাসীদেরকে মূল্যায়ন করেন।’
তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেন, যারা প্রবাসে বিজনেস করে সফলতা অর্জন করেছে, তাদেরকে নিয়ে যেন সরকার নতুন করে চিন্তা করে। প্রবাসী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য যেন সংসদে দশ শতাংশ কোটার মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের সুযোগ থাকে সেই ব্যবস্থা করা।
এ দিকে, আগামী ২৩ ডিসেম্বর হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশে আমেরিকান ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা ও মত বিনিময় সভার আয়োজন করেছে আমেরিকান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (এবিসিসিআই)। সে আয়োজনে বাংলাদেশে আমেরিকান অ্যাম্বাসেডর উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে আয়োজক কমিটি। এতে আমেরিকান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (এবিসিসিআই) জুলাই গণঅভ্যুত্থান তথা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরনে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারবর্গের সাহায্যের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে এক কোটি টাকা অনুদান দেওয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।