বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রের আয়কর-অভিবাসী নীতিমালা নিয়ে কানেকটিকাটে প্রথম সেমিনার অনুষ্ঠিত

বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

কানেকটিকাট, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যে প্রবাসীদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত হয়েছে আয়কর ও অভিবাসী নীতিমালা সম্পর্কিত বিশেষ সেমিনার।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্টাম্পফোর্ড সিটির গভর্নর সেন্টারে অনুষ্ঠিত সেমিনারের আয়োজন করেন সামাজিক সংগঠক জাবের শফী। অনুষ্ঠানে মার্কিন নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়কর সংক্রান্ত পরামর্শ দেন সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট (সিপিএ) ও একজন অভিবাসী আইনজীবী।

কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের প্রথম বাংলাদেশি সিপিএ শ্রাবণী সিং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সুকৌশলে তাদের আয়কর (ট্যাক্স) ফাঁকি দিয়ে থাকেন। তাদের কিছুই হয় না, আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা সরকারকে ট্যাক্স দিতে হিমশিম খেতে হয়। আবার ট্যাক্স ফাইলিংয়ে কোন ভুল-ভ্রান্তি হলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই রাজস্ব বিভাগ থেকে জরিমানা ও গ্রেফতারি পরোয়ানাও বাড়িতে চলে আসে। এর কারণ সঠিক নিয়মে ট্যাক্স ফাইলিং করা হয়নি।’

প্রতি বছর ট্যাক্স ফাইলিং মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই একজন সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট (সিপিএ) দিয়ে অবশ্যই ট্যাক্স ফাইলিং করার পরামর্শ দেন তিনি।

শ্রাবণী সিং আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর বাংলাদেশি সামাজিক সংগঠন রয়েছে, যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশ থেকে শিল্পীদের নিয়ে এসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে লাখ লাখ ডলার অপচয় করে থাকেন। এ ধরনের অপচয় না করে সেই পরিমাণের অর্থ দিয়ে এখানে স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের নানা সেবা করা যায়। তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সহায়তা কিংবা স্বাস্থ্যবীমাহীন প্রবাসীদের চিকিৎসা সেবায় সাহায্য করলে শুধু তাদেররই উপকার নয় বরং সমাজের উন্নয়ন হবে।’

এ ধরনের কাজে প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান শ্রাবণী।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু ট্যাক্স ফাইলিং সবার জন্য বাধ্যতামূলক। তাই, ট্যাক্স ফাইলিংয়ের মৌসুমে কোন অবহেলা না করে যথা সময়ে নিজেদের আয়ের সঠিক হিসাব দিয়ে যথা নিয়মে ট্যাক্স ফাইল করেবেন। পরবর্তী যাতে কোন বিড়ম্বনা না হয়, সেজন্য অবশ্যই একজন সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট দিয়ে আপনার পরিবারের সঠিক আয়কর দিন।

তিনি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক অলাভজনক সংগঠনের যুব ও শিশু উন্নয়ন এবং হেইট ক্রাইম বিরোধী প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি তহবিল সংগ্রহে করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

নিউ ইয়র্কের সুপরিচিত সিপিএ সারোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘ট্যাক্স ফাইলিংয়ের পর রিটার্ন মানি বা প্রাপ্ত অর্থ নিয়ে অনেক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীতে অশান্তির সৃষ্টি। স্ত্রীকে না জানিয়ে স্বামী একাই সেই অর্থ খরচ করে ফেলেন। আবার বিভিন্ন সময়0 স্ত্রীর অজান্তে ব্যাংক লোন নিয়েও পরে সংসারে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই, ট্যাক্স ফাইলিংয়ের আগে ও পরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবশ্যই আলোচনা করে নেবেন প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সংসারে কী কাজ করবেন।’

এ জন্য অভিজ্ঞ সার্টিফাইড পাবলিক একাউন্টেন্ট (সিপিএ) দিয়ে নিয়মিত ট্যাক্স ফাইলিং করার পরামর্শ দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিবাসী নতুন নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করেন নিউ ইয়র্কের সুপ্রতিষ্ঠিত আইনজীবী খায়রুল বাশার।

তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিলের ঘোষণায় অন্যান্য দেশের অবৈধ নাগরিকদের মত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি।’

তাদেরকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এত সহজে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বাতিল ও অবৈধ নাগরিকদের বহিস্কার করতে পারবেন না। এ দেশের সংবিধানের সংশোধন ও আইনী অনেক ঝামেলা রয়েছে।’

তাই, যুক্তরাষ্ট্রে কাগজপত্রহীন বাংলাদেশিদের দুঃশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দেন খায়রুল বাশার।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নামে করে এবং আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির নাম করে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তাদের অনেকেই দেশে ফেরত যেতে হতে পারে।’

সময়ের মধ্যে কেউ যদি কোন নির্দিষ্ট আদেশ পেয়ে থাকেন, তাদের ফেরত যেতে হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শুধু রাজনৈতিক আশ্রয় নয় অভিবাসী সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় পড়লে প্রবাসীদের অভিজ্ঞ অভিবাসী আইনিজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে বক্তব্য দেন কমিউনিটির নেতা নাজিম উদ্দিন, জাবের শফি, এডভোকেট মাহবুব উদ্দিন ও আবুল কালাম।