ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: প্রায় এক মাস ধরে চরম দাবানল পরিস্থিতিতে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় নতুন করে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দাবানল। অঙ্গরাজ্যটির উত্তর কাস্টেইক লেক থেকে বুধবার (২২ জানুয়ারি) নতুন এ দাবানলের সূত্রপাত হয়, যাতে পুড়ে গেছে ১০ হাজার একরেরও বেশি এলাকা। বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন হাজারো বাসিন্দা। সংবাদ দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, বিবিসির।
গত সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডস ও আলতাদেনায় দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করেছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ফায়ার ফাইটারসের (আইএএফএফ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কেলি। সেসময় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া হাজার হাজার বাড়ি দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘এখানে ধ্বংসের মাত্রা ‘সর্বনাশা’ বা ধ্বংসযজ্ঞের মতোই।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে তীব্র ঝোড়ো বাতাসের কারণে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ছাই ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি। এতে ১২ হাজারের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস এবং কমপক্ষে ২৫ জনের প্রাণহানি হয়।
তবে, সেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই নতুন করে সৃষ্টি হলো দাবানল। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে ইন্টারস্টেট ফাইভ মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক, যা মেক্সিকো থেকে কানাডা পর্যন্ত বিস্তৃত।
দাবানলের কারণে আতঙ্কিত বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। বহু মানুষকে সরিয়েও নেয়া হয়েছে।
বিশাল এই বিপর্যয়ের পর লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল বাহিনীর সক্ষমতা এবং প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দমকল বিভাগের বাজেট হওয়া উচিত কি না এবং শহরের পানির পরিকাঠামো আরও উন্নত করা যেত কি না; তা নিয়েও কর্মকর্তারা তর্ক করছেন।
এছাড়া, দমকলের ইউনিটগুলো দ্রুত মোতায়েন করা হলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যেত কি না, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়।
লস এঞ্জেলেস ফায়ার চিফ ক্রিস্টিন ক্রাউলি মনে করেন, শহরের এই পরিস্থিতি তার বিভাগকে হতাশ করে তুলেছে। কারণ, আগুন লাগার আগে সংস্থাটির সিদ্ধান্ত এবং আগুন আরও আগে নিয়ন্ত্রণে আনা যেত কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তবে এই আগুন নেভানো বা নিয়ন্ত্রণের মতো পর্যাপ্ত দমকলকর্মী তাদের নেই বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
তবে অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, শুধু দমকল বাহিনীর প্রচেষ্টার ঘাটতি নয়; এই দাবানলের অন্যতম বড় কারণ জলবায়ু সংকট বা বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি।
ফায়ারফাইটার্স ইউনাইটেড ফর সেফটি, এথিক্স অ্যান্ড ইকোলজির (ফুসি) সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এবং সাবেক ওয়াইল্ডল্যান্ড ফায়ার ফাইটার টিমোথি ইঙ্গলসবি বলেছেন, ‘সমস্যা হলো আমরা দাবানল প্রতিরোধ বা নিভানোর জন্য আমাদের সব মনুষ্য সীমা অতিক্রম করেছি। বিশেষ করে ঝোড়ো বাতাসের এমন পরিস্থিতিতে, যার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসূত্র রয়েছে।’
‘এটি (দাবানল) নিয়ন্ত্রণের সব মনুষ্য সীমা আমরা অতিক্রম করে ফেলেছি।’
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের মতো তীব্র গতির বাতাস ৭ জানুয়ারির দাবানলকে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে দেয় বিভিন্ন এলাকায়। ধ্বংসাত্মক এই দাবানলে হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ। পুড়ে যায় ১২ হাজারের বেশি বাড়িঘর ও স্থাপনা। সব হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন অন্তত পৌনে এক লাখ বাসিন্দা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের বিস্তীর্ণ এলাকা।