বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

শিরোনাম

বাংলাদেশের ওপর শুল্ক স্থগিত, ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১০, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৫টিরও বেশি দেশের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড পেজে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আপনাকে ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।’

আর বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে চীন ও অন্যান্য দেশ উপলব্ধি করতে পারবে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দিন আর থাকবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না।’

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।’

পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, ‘আমি ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত অনুমোদন করেছি। একই সঙ্গে এই সময়ের জন্য পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটাও অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

এর আগে গত ২ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। যার মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন।

এতে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ সরকার। সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যাতে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরাই প্রথম দেশ যারা রফতানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রফতানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।’

আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার ও পারস্পরিক শুল্ক ভারসাম্য তৈরির লক্ষ্যে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারকে একটি চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রফতানিতে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে সেটি দূর করতে আমরা উন্মুক্ত আলোচনা ও সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্য শূন্য বা শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাচ্ছে এবং আরও ১০০টি পণ্যকে এ তালিকাভুক্ত করার বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’