নিউইয়র্ক: জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার বার্ষিক সাধারণ সভায় নানাবিধ কারণে কার্যকরী কমিটির মেয়াদ আরেক বছর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে সানাই রেষ্টুরেন্ট ও পার্টি হলে রোববার (৬ এপ্রিল) বিপুলসংখ্যক জালালাবাদবাসির উপস্থিতিতে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিমের সঞ্চালনায় মঞ্চে ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য আজিমুর রহমান বুরহান ও বদরুন নাহার খান মিতা, ছদরুন নূর, সৈয়দ নাজমুল হাসান কুবাদ প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন লুকু (সিলেট), শামীম আহমেদ (সুনামগঞ্জ), মো. শফিউদ্দিন তালুকদার (হবিগঞ্জ), মো. জাবেদ উদ্দিন (মৌলভীবাজার), কোষাধ্যক্ষ মো. আলীম, প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক ফয়ছল আলম, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হোসেন আহমদ, আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দীন, নির্বাহী সদস্য হুমায়ুন কবির সোহেল।
কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং প্রবাসে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের যারা ইন্তেকাল করেছেন তাঁদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার আজীবন সদস্য কয়েছ আহমদ। এরপর বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম ও কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম নিজ নিজ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম তার দীর্ঘ উপস্থাপনায় সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন। সংকটময় মুহুর্তে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়া পর থেকে যে সব কার্যক্রম করেছেন তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম সংগঠনের একাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ডলারের অধিক অর্থ উদ্ধারের জন্য বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক ময়নুল ইসলাম গংদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কস্থ কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী অফিসে অভিযোগ দায়ের করেছেন- যা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। এ সময় তিনি উপস্থিত জালালাবাদবাসীকে আশ্বস্ত করেন যে শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম তার রিপোর্টে ২০২৪ সালের মে থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সংগঠনের আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই সময়ে সংগঠনের আয় হয়েছে ৯৩ হাজার ৯৫৩ ডলার ১৪ সেন্ট। এত্থেকে ৮৭ হাজার ৩১৯ ডলার খরচ করা হয়েছে। আর বাকি অর্থ ব্যাংকে জমা রয়েছে, যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীম।
সভায় উপস্থিত শতাধিকের বেশী সদস্য সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্টের উপর মুক্তআলোচনায় অংশ নেন। এ আলোচনায় অংশ নেন সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য নাসির উদ্দিন, আব্দুস শহীদ, তোফায়েল চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিছবাহ আহমেদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরল ইসলাম, গোল্ডেন প্লেস এ্যান্ড পার্টি হল ও ক্যাটারিংয়ের সিইও বিলাল ইসলাম, সংগঠনের সাবেক সহ-সভাপতি জোসেফ চৌধুরী, সৈয়দ নোমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন সোহাগ, বিয়ানীবাজার সমিতির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম, ফকর উদ্দিন ও গহর চৌধুরী কিনু, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, বাংলাদেশ সোসাইটির জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট সাইকুল ইসলাম, রিপন আহমেদ, বিয়ানীবাজার সমিতির সহ সভাপতি মহিবুর রহমান রুহুল, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম অপু, কুইন্স বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি শমস উদ্দিন, হারুন মিয়া, অ্যাকটিভিস্ট আমিনুল ইসলাম চুন্নু, হবিগঞ্জ জেলা কল্যাণ সমিতি যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম তালুকদার, লিয়াকত আলী চেয়ারম্যান, সংগঠনের আজীবন সদস্য চৌধুরী মোমিত তামিম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সালেহ চৌধুরী, শফিকুর রহমান, কাজীরুল ইসলাম, জুয়েল আহমদ, লিটন আহমেদ, মোকতার আহমদ, মোস্তাকুর রহমান লিটন, দিপংকর দেব, ওলিউর রহমান, তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, মো. আবু ফজর, মো. খলিলুর রহমান, কামাল চৌধুরী, নজরুল আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক উপদেষ্টা ছমির উদ্দিন, এস্টোরিযা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উপদেষ্টা আব্দুর রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক মঈনুল চৌধুরী মনসুর আহমেদ, হেলথ ফার্স্টের এজেন্ট তৌহিদুল ইসলাম সজীব, আবু সাদেক, মোসাদ্দেক আহমেদ শিফু, জয়ন্ত দাস, মতিউর রহমান, সজল কান্তি প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত সাধারণ সদস্যগণের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। এ সময়ের মধ্যে বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের প্রতারণার মামলা সংক্রান্ত বিষয়টির একটি সুরাহা করতে কার্যকরী পরিষদকে সর্বাত্মকভাবে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়। একই সাথে বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টির মেয়াদও এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। এদিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবেন বলেও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সভায় বর্তমান গঠনতন্ত্রকে আরো যুগোপযোগী করতে কিছু ধারা-উপধারার সংশোধনীর জন্য আগের সাধারণ সভায় গঠিত ‘গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি’ তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন কমিটির প্রধান সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা। এ সময় সংশোধনী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ মজিদ ও নির্বাচন কমিশনার মিনহাজ আহমেদ সাম্মু। এসময় নানা পর্যালোচনার পর সংশোধনীগুলোতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়।
সভার কার্যতালিকায় বিবিধে উপস্থিত অনেকেই তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে অনেকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্টের উপরে আলোচনা করে সাধুবাদ জানান এ কারণে যে, তিনি তার বক্তব্যে সংগঠনের সংকট কাটাতে এবং সংগঠনটিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাদের প্রচেষ্টা এবং সমঝোতার সব দ্বার খোলা আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘প্রবাসে জালালাবাদবাসীর ঐক্যবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই- তা করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
বদরুল হোসেন খান সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে, গঠনতন্ত্র ও জালালাবাদবাসীর মান সম্মানকে অক্ষুন্ন রেখে যে কোনো সমঝোতায় বর্তমান কার্যকরী পরিষদ সব সময় প্রস্তুত। এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘এই অচলাবস্থা বর্তমান কার্যকরী কমিটি তৈরি করেনি। তারপরেও আমরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, আপনারাও আমাদেরকে সহযোগিতা করুন।’