শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চার ফৌজদারি অভিযোগ ক্যাপিটল দাঙ্গা কমিটির

বুধবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২২

প্রিন্ট করুন
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসবিষয়ক তদন্ত কমিটি বলছে যে, ‘গত বছর ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিদ্রোহসহ অন্য আরো ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে। খবর বিবিসির।

ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বাধীন কমিটি ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করতে বিচার বিভাগকে সর্বসম্মতভাবে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করতে অস্বীকার করা ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী হোপ হিকসের একটি নতুন ক্লিপও প্রচার করেছে। ট্রাম্প সমর্থকরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে হামলা চালায় ও জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতায় বাধা দেয়। ট্রাম্প কোন অন্যায় করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি এ প্যানেলকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন।

দাঙ্গার তদন্তে প্রায় ১৮ মাস ব্যয় করার পর, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস সিলেক্ট কমিটি সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) তাদের চূড়ান্ত সভায় সুপারিশ করেছে যে, ট্রাম্পকে চারটি অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে। এগুলো হল- বিদ্রোহকে প্ররোচিত করা, সহযোগিতা করা, সাহায্য কিংবা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা; দাপ্তরিক কাজে বাধা দেয়া; যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারণার ষড়যন্ত্র।

মার্কিন বিচার বিভাগ- যার প্রসিকিউটররা এরই মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার বিষয়টি বিবেচনা করছেন, তাদের কংগ্রেশনাল কমিটির এ সুপারিশ অনুসরণ করতে হবে না। যদিও প্যানেলের কর্মকান্ড বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতীকী, তবে চেয়ারম্যান প্রস্তাবিত অভিযোগগুলিকে ‘বিচারের রূপরেখা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সুপারিশ সম্পর্কে বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

কংগ্রেসে মেরিল্যান্ড ডেমোক্র্যাট সদস্য জেমি রাসকিন যিনি ওই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন তিনি বলেন, ‘এ বিদ্রোহ যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এটি একটি গুরুতর ফেডারেল অপরাধ, যা সংবিধানেই উল্লেখ করা হয়েছে।’

প্যানেলের সাত জন ডেমোক্র্যাট ও দুই জন রিপাবলিকান সোমবার তাদের প্রাথমিক ১৬১ পৃষ্ঠার কার্যনির্বাহী সারাংশ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে, জনগণের ইচ্ছাকে নস্যাৎ করতে ক্যাপিটল দাঙ্গার আগে তা প্ররোচিত করা ও দাঙ্গার সময় ট্রাম্প ‘বিভিন্ন পর্যায়ে ষড়যন্ত্র’ করেছেন।

হাউস কমিটি যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছে যে, ট্রাম্প তার পরাজয় উল্টে দিতে সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ ও তার নিজের ভাইস-প্রেসিডেন্টকে চাপ দেয়ার আগে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার বিষয়টি যে মিথ্যা, তা তিনি জানতেন বলে তিনি প্রচারনা থেকে জানা যায়। প্যানেল তাকে অভিযুক্ত করে বলেছে যে, বাইডেনের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর রোধ করতে সবশেষ চেষ্টা হিসেবে কংগ্রেসে দাঙ্গা উসকে দিয়েছেন তিনি।

শত শত পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বুধবার (২১ ডিসেম্বর) প্রকাশ হওয়ার কথা। সোমবার, প্যানেল দীর্ঘকালীন ট্রাম্পের সহযোগী হোপ হিকসের সাথে তাদের জবানবন্দি থেকে একটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে। যিনি বলেছিলেন যে, তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন যে, নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা দাবি করা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি ও তার দল ‘তার উত্তরাধিকারের ক্ষতি করছেন’।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প তার এ উদ্বেগকে পাত্তা দেন নি।’

সাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি বলেন, ‘তৎকালীন-রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ‘এ রকম কিছু বলেছিলেন যে, ‘আমি হারলে কেউ আমার উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তা করবে না, তাই এটি কোন ব্যাপার হবে না।’

‘জয়ই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।’

তদন্তকারীদের সাথে এগিয়ে এসে সহযোগিতা না করার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টের বড় মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প যিনি হোয়াইট হাউসের সাবেক সহযোগীও ছিলেন তার সমালোচনা করেছে কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ‘ট্রাম্পের অন্য সহযোগীদের মতো মিজ ট্রাম্প, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস ও ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি কায়লেই ম্যাকইনানি কিছু বিষয়ের সম্পূর্ণ স্মৃতির অভাব প্রদর্শন করেছেন বা অথবা স্পষ্ট বা সরাসরি কথা বলেন নি।’

গত মাসে শুরু করা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায়, একটি বিবৃতি প্রকাশ করে কমিটিকে অভিযুক্ত করে বলা হয় ‘তারা (কমিটি) কখনো ট্রাম্পের পক্ষপাতিদের জন্য ন্যায়বিচার দেখান না, যারা এ দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্ক’।

‘এ ক্যাঙ্গারু কোর্ট একটি ভ্যানিটি প্রকল্প ছাড়া আর কিছুই নয়; যা আমেরিকানদের বুদ্ধিমত্তাকে অপমান করে ও আমাদের গণতন্ত্রকে উপহাস করে।’

কমিটি আরো বলেছে যে, ‘এটি কমিটিকে মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থিসহ কংগ্রেসের চারজন রিপাবলিকান সদস্যকে হাউস এথিক্স কমিটিতে পাঠাবে।’

মিসিসিপি ডেমোক্র্যাট সদস্য ও কমিটির চেয়ারম্যান বেনি থম্পসন বলেন, ‘যদি আমরা আইন ও গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে টিকে থাকতে চাই, তাহলে এটা আর কখনো ঘটতে দেয়া যাবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বাস ভেঙে গেলে আমাদের গণতন্ত্রও ভেঙে পড়বে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস ভেঙেছেন।’

উল্লেখ্য, ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে নয় শতাধিক লোককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।